বহরমপুর: মুর্শিদাবাদের শিক্ষক পরিবারকে নৃশংস খুনের প্রতিবাদে থানা ঘেরাও শিক্ষক ঐক্যমুক্ত মঞ্চ ও নাগরিক সমাজের৷ নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ধিক্কার মিছিল শিক্ষকদের৷ শিক্ষক খুনে কেন গ্রেপ্তারি নয়, প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার জিয়াগঞ্জ বাজার অবরোধ করেন স্থানীয়রা৷
স্থানীয়দের অবরোধে সমর্থন করেন শিক্ষকদের একাংশ৷ একই সঙ্গে থানার সামনে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভে বসেন শিক্ষকদের একাংশ৷ পরে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ছ’সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন৷ প্রতিনিধি দলকে শিক্ষক খুনে দ্রুত গ্রেপ্তারির প্রতিশ্রুতি দেন৷ এবিষয়ে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ২৪ ঘণ্টা পুলিশ সুপারকে সময় দিয়েছি৷ তার মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে ২৪ ঘণ্টা পরে ফের তীব্র কর্মসুচি গ্রহণ করা হবে৷’’
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত না এগলে আগামীকাল ডিএম ও এসপি অফিসে অভিযোগ জানানোর পর কোনও সদুত্তর না পেলে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ৷ শিক্ষক পরিবারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করার ঘটনার ২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কেন খুনিদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলে দাবি তুলেছেন মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ৷ তন্ময়বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘রাজ্যে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল৷ অথচ ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের কোনও নেতা মন্ত্রীর প্রতিবাদ তো দূরের কথা সামান্য বিবৃতিও শোনা গেল না! বিদ্যজনেরা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক সত্মা কোথায় গেল? মুখ্যমন্ত্রীর এমন নীরবতা বাংলার মানুষকে হতাশ করেছে!’’
অন্যদিকে, স্ত্রী-পুত্রসহ স্কুল শিক্ষককে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়৷ সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ নাকি স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা৷ তবে পুলিশের অনুমান, সপরিবারে শিক্ষককে খুনের পিছনে পরিচিত কারোর হাত রয়েছে৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয়দের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ওই শিক্ষক৷ ঋণের টাকা ফেরত দেওয়া ঘিরে টানাপোড়েন হয়ে থাকতে পারে৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা, ঋণের টাকা না মেটানোই খুব সম্ভবত শিক্ষককে খুন করা হয়ে থাকতে পারে৷ ঋণের পাশাপাশি শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের সঙ্গে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি মণ্ডলের সঙ্গেও সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল বলেও অনেকে মনে করছেন৷ তাদের সম্পর্কে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি ছিলেন কি না তা নিয়েও শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত৷ তদন্তে বন্ধু প্রকাশ পালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যেই শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ তবে ঘটনার দু’দিন পরও কাইকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷
বজয়া দশমীর দিন নিজের বাড়িতে রহস্যজনকভাবে খুন হন স্কুল শিক্ষক ও তাঁর পরিবার৷ মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের সদরঘাট লাগোয়া লেবুবাগান এলাকায় স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল, তাদের ৫ বছরের একমাত্র সন্তান অঙ্গনের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়৷ সপরিবারে শিক্ষকের খুনের প্রতিবাদে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে৷ আলমারি অবিন্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় খুনের মোটিভ ঙিরে জারি হয়েছে ধোঁয়াশা৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পারিবারিক শত্রুতার কারণে তাঁদের নিশংস ভাবে খুন করে করা হয়ে থাকতে পারে৷ যেভাবে শিক্ষা ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে যে ভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে, তাঁর পিছনে পেশাদারী খুনিদের যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যেই নিহত শিক্ষকের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২০০৫ সালে শিক্ষকতার চাকরি যোগদান করেন বন্ধুপ্রকাশ৷ বিয়ে করেন ৬ বছর আগে৷