কলকাতা: দীর্ঘ লকডাইনে জেরবার অর্থনীতি৷ কাজ হারিয়েছেন কয়েকটি পরিযায়ী শ্রমিক৷ বেসরকারি সংস্থাগুলির কর্মীদের হাল বেহাল৷ কমছে বেতন৷ রয়েছে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা৷ কীভাবে সংসার চলবে তা ভেবে উঠতে পারছেন না মধ্যবিত্ত জনতা৷ একদিকে বেহাল অর্থনীতি, অন্যদিকে করোনার তাণ্ডব৷ সাঁড়াশি আক্রমণে সাধারণ জনতার জীবন ওষ্ঠাগত হলেও কুছ পরোয়া নেই বাংলার দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের৷ করোনা মহামারীর আবহে একে অপরের ছিদ্র অনুসন্ধানে নেমেছে তৃণমূল-বিজেপি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জোরদার প্রচার৷ বিজেপি বলছে, ‘ভয় পেয়েছে মমতা’৷ তৃণমূল বলছে, ‘ভাট বকছে বিজেপি’৷ মহামারীর মধ্যেও চলছে তরজা৷ তপ্ত বঙ্গ রাজনীতির ময়দান৷ কিন্তু, গৃহবন্দি জনতা খোঁজ কেউ কি রাখে? রাজনীতির আবহে গুরুত্বহীন জনতার যন্ত্রণা!
করোনা আবহে মধ্যে নতুন স্লোগান তুলে বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়ে গিয়েছে সংঘাত৷ বিভিন্ন ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে কাটাক্ষ করে নতুন স্লোগান তুলেছে বিজেপি৷ ‘ভয় পেয়েছে মমতা’ এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে প্রচার চালাচ্ছেন বিজেপি নেতারা৷ পিছিয়ে নেই তৃণমূল৷ রাজ্য সরকারের সমর্থনে ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করতে তৃণমূলের হ্যাশট্যাগ ‘ভাট বকছে বিজেপি’৷
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ‘ভয় পেয়েছে মমতা’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে টুইটে জানিয়েছেন, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না৷ বিশ্বাসযোগ্য নয় রাজ্যের পরিসংখ্যান৷ বাংলার মানুষ তাঁদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে খুঁজছেন, যিনি আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বটে৷’’ টুইটারে ‘ভয় পেয়েছে মমতা’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বাবুল সুপ্রিয় আক্রমণ করেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘৫৭জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পর ১৮ জন বলে চালানো হল৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটি ‘মিথ্যাশ্রী’ পুরস্কার পাবে৷ করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর জন্য যে সমস্ত চিকিৎসকদের ভয় দেখানো হচ্ছে, তাঁদের সমবেদনা জানাচ্ছি৷’’ ‘ভয় পেয়েছে মমতা’ এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লাগাতার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা৷ চলছে একের পর এক প্রশ্নবান৷
বিজেপি যখন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ‘ভয় পেয়েছে মমতা’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ময়দান তপ্ত করার চেষ্টা করছে, ঠিক তখন পাল্টা ময়দানে নেমেছে তৃণমূল৷ বিজেপির ‘ভয় পেয়েছে মমতা’র পাল্টা স্লোগান স্লোগান তুলেছে তৃণমূল৷ ‘ভাট বকছে বিজেপি’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেছে সদ্য সক্রিয় হয়ে ওঠা তৃণমূলের আইটি সেল৷ লাগাতার চলছে প্রচার৷
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘গঠনমূলক কাজে তো নামগন্ধ নেই, খালি জাল খবার আর মিথ্যা অপপ্রচার ভরসা৷’’ ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টি প্রমাণ করে দিয়েছে যে কোনও কাজ না করেও স্রেফ বাজে বকে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকা যায়৷ করোনা পরিস্থিতি আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে৷ দিলীপ ঘোষ কিছু ভুল বললাম কী৷’’ ‘ভাট বকছে বিজেপি’ এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের সদ্য সক্রিয় হয়ে ওঠা আইটি সেল লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকারের সমর্থনে৷ একই সঙ্গে কেন্দ্রের কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
অতি সক্রিয় হয়ে ওঠা বিজেপি-তৃণমূলের আইটি সেল এর নয়া হ্যাশট্যাগের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়া এখন তপ্ত৷ একে অপরের বিরুদ্ধে ছিদ্র অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু করোনা আবহের মধ্যেও দুই প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণের মরিয়া হয়ে উঠেছে, তখন চিন্তায় ঘুম উড়েছে সাধারণ জনতার৷ পরিশ্রমী আজও বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন৷ কবে আবার কাজে ফিরবেন, কীভাবে সংসার চলবে? সেই নিয়ে যখন খাওয়া-ঘুম উড়েছে সাধারণ মধ্যবিত্ত জনতার ঠিক, তখনই তৃণমূল বিজেপির একে অপরের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি কতটা মানবদরদী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ কে ঠিক, কে ভুল, কার তথ্য সঠিক, এই নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন বাংলার সাধারণ মানুষ৷ তাদের একটাই দাবি, রাজনৈতিক দল রাজনীতি করবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু, মহামারীর মধ্যেও কি রাজনীতির খেয়োখেয়ি খুব জরুরি ছিল? রাজনীতি ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে প্রকৃত মানবদরদী হতে পারত না তৃণমূল-বিজেপি? রাখা যেত না সাধারণ মানুষের খবর? কীভাবে চলছে তাঁদের সংসার? এক দিন চাল-ডাল বিলি করেই কি সব দায় ঝেড়ে ফেলা যায়? করোনা মহামারীতে সত্যিই ‘ভয় পেয়েছে’ন সাধারণ জনতা৷ সত্যিই ‘ভাট বকছে’ গৃহবন্দি জনতা! সঞ্চয় ভেঙে, এক বেলা কম খেয়ে, আর কত সমঝোতা করবে মধ্যবিত্ত জনতা?