কাবুল: আফগানিস্তানে দিন দিন বাড়ছে তালিবানি আগ্রাসন। একের পর এক সেনাঘাঁটি, শহর দখল করার পর দ্রুতবেগে রাজধানী কাবুলের দিকে এগোচ্ছে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। কাবুল থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তারা। উত্তর দিক থেকে কাবুলে ঢোকার প্রবেশপথ হিসেবে চিহ্নিত যে মাজার-ই-শরিফ শহর, চতুর্দিক থেকে সেটি ঘিরে ফেলেছে তালিবান। আফগান সেনা এবং যৌথ বাহিনীর উদ্দেশে লাগাতার বোমাবর্ষণ চলছে। দক্ষিণের লোগার প্রদেশেরও দখল নিয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই দেশের ১২টি প্রদেশ নিজেদের দখলে এনেছে তালিবানরা।
দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো এবং মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে তালিবানদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। কিন্তু, মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়ার পরই স্বমূর্তি ধারণ করে জঙ্গি গোষ্ঠী। প্রদেশগুলিতে ক্ষমতা দখলের পর দেশবাসী তথা সরকারি আমলা ও সেনাবাহিনীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বলে বার্তা দিলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নিয়েছে তালিবানরা। সম্প্রতি এই নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। ওই রিপোর্ট বলছে, আত্মসমর্পণ করা আফগান জওয়ানদেরও হত্যা করছে তালিবানরা। আফগানিস্তানের নিরস্ত্র জনতার ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এমনকি, জঙ্গিদের সঙ্গে আফগান যুবতীদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিয়ের নামে যৌন নির্যাতন শুরু করেছে জঙ্গিরা।
তালিবানিদের এই দ্বিচারিতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আফগানিস্তানের আমেরিকার দূতাবাস। সরকারি ট্যুইটার হ্যান্ডেলে তারা জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী আফগান সেনা জওয়ানদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা যু্দ্ধাপরাধের সমান, যা মেনে নেওয়া যায় না। আফগানিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে থেকে নিজেদের নাগরিকদের বার করার কাজ করছে অনেক দেশ। তার মধ্যে ভারতও রয়েছে। যদিও কূটনৈতিক ব্যক্তিদের উপর কোনও আক্রমণ হবে না বলে জানিয়েছেন তালিবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন। সেই সঙ্গে, আফগানিস্তানবাসীর জন্য ভারতের অবদানের প্রশংসাও করেছেন। তবে, ভারতীয় সেনা আফগান সেনাকে সাহায্য করলে তার ফল ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তালিবানের মুখপাত্র।
অন্যদিকে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য, বিশেষ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা উপদেষ্টা জারি করেছে কেন্দ্র। কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসের বক্তব্য, আফগানিস্তানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিতে দূতাবাসের নিরাপত্তা পরামর্শের প্রতি কর্ণপাত করছেন না নাগরিকরা। নিজেদেরকে মারাত্মক বিপদে ফেলছেন। ভারতীয় সাংবাদিকরা গ্রাউন্ড রিপোর্টিং করতে আফগানিস্তান আসছেন এবং অতিরিক্ত ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাদের এখানে থাকা ও কাজ করার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া উচিত। গ্রাউন্ড রিপোর্টিংয়ের জন্য আফগানিস্তানে আসা ভারতীয় সাংবাদিকদের থাকা ও চলাফেরার সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য ভারতীয় সাংবাদিকদের সুপ্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা ফার্মগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, যারা দেশে তাদের থাকার এবং চলাফেলার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে পারবে।