কলকাতা: উমপুন পরবর্তী পরিস্থিতি এবং করোনা সংকট নিয়ে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানালেন পরিস্থিতি সামাল দিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে কাজ৷
তবে এদিন বৈঠকের শুরুতেই হাওড়ায় গাছ কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দমকলকর্মীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সিইএসসি’র বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তবে এই ঘটনায় সিইএসসি কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে বা যাঁরা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে৷ নিহত দমকলকর্মীর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি৷
উম্পুন পরিবর্তী পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ২ লক্ষ অফিসার এবং কর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছে৷ তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় মানুষও৷ এগিয়ে এসেছে প্রতিটি পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, শহরাঞ্চলে ৯০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরিছে৷ তবে গ্রামে জল না সরলে বিদ্যুতের খুঁটি বসানো সম্ভব হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরবনে একবারে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে৷’’ সামনেই পূর্ণিমা আসছে৷ এর আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হবে৷তিনি জানান, সুন্দরবন, সাগরদ্বীপ, নামখানা অঞ্চলে নদীর বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ৷ রায়মঙ্গল, মাতলা, বিদ্যাধরী, মুড়িগঙ্গা সহ বেশকিছু নদীর বাঁধ দূর্বল হয়ে গিয়েছে৷ পূর্ণিমার ভরা কোটালে তা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ সোনাখালি, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, বাউনিয়ার মতো বেশ কিছু গ্রামে নদীর বাঁধ কোনওরকমে টিকে আছে৷ যে কোনও মুহূর্তে জোয়ারে বিপর্যয় ঘটতে পারে৷ অবিলম্বে সেই সকল বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ করতে হবে৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সুপার সাইক্লোন উম্পুনে ৮টি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর ২৪ পরগণা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা৷ এই দুই জেলার এসপি-দের সঙ্গে নিয়ে জেলা শাসকদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যন্ত্রী৷উম্পুনে ৬০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ ৬ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত৷ ১০ কোটি মানুষ পরোক্ষাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডকেও টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁদের ইঞ্জিনিয়র, কর্মীরা অনেক তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছেন৷
তিনি আরও বলেন, সিইএসসি সরকারি দফতর নয়৷ বাম আমলে তারা রাজ্যে এসেছে৷ তারাও চেষ্টা করছে৷ তবে আমি বলব সিইএসসি’র থেকে অনেক ভাল কাজ করছে স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ড৷ কিন্তু এরই মাঝে লোডশেডিং নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে৷ সরাসরি আনন্দবাজার পত্রিকার দিকে আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাদের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিইএসসি’র সঙ্গে তাদের ঝগড়া থাকতেই পারে৷ কিন্তু কাউকে প্ররোচনা দেওয়া উচিত নয়৷ এই দুর্যোগে পাশে না থেকে তারা রাজনীতি করছে৷ গ্রামে সাড়ে চার লক্ষ বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়েছে৷ এখনও ২ লক্ষ মানুষ ক্যাম্পে আছে৷ আমরা একসঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু এর মাধে নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ, ত্রাণের যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে৷ কোনও মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে, তা দেখার দায়িত্ব জেলা শাসকদের দিয়েছেন তিনি৷ বিভিন্ন জায়গায় শুকনো খাবার, বেবি ফুড, জামা-কাপড় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷এছাড়াও নিহতদের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে৷ গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার টাকা এবং অল্প আহতদের ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেশন দোকান ভেঙে গিয়ে থাকলে, অন্যত্র দোকানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তা সম্ভব না হলে, সেলফ হেল্প গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দিতে হবে৷