কলকাতা: দেশের সংবিধান রক্ষার লক্ষ্যে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রবিবার সন্ধ্যা থেকে তিনি ধর্নায় বসেছেন৷ ধর্নার দ্বিতীয় দিনে তিনি আজ রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের পুরস্কৃত করলেন৷ ধর্না স্থলের পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চ থেকে তিনি পুরস্কার প্রদান করেন পুলিশ অফিসারদের৷
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
পুলিশ পরিবারের সকলে এখানে সমবেত হয়েছেন৷ আমি ক্ষমা চাইছি কারণ আজকের অনুষ্ঠান উত্তীর্ণতে ছিল, কিন্তু, জরুরী কারণে আমি আটকে যাওয়ার জন্য ওনাদের অনুষ্ঠান প্রায় নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু আমি আমার কোনও অনুষ্ঠান বাতিল করিনি। ক্যাবিনেট বৈঠকও হয়েছে। নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশও মোবাইল থেকে করেছি। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ কর্মীরা অপেক্ষা করে আছে এই অনুষ্ঠানটির জন্য। আমরা তাই ঠিক করলাম রাস্তায় এই অনুষ্ঠানটি করার।
পুলিশকর্মীদের রাস্তাই ঘরবাড়ি, রাস্তাই জীবন, রাস্তাই ওদের মান সম্মান, রাস্তাই ওদের আপন পর। আমি পুলিশকে নিয়ে গর্ববোধ করি। ওনারা দিনের পর দিন রোদ হোক, ঝড় হোক, জল হোক, খেলা হোক, বিয়েবাড়ি হোক, উৎসব হোক, যাত্রা হোক, নাটক হোক, সংস্কৃতি হোক, রাজনৈতিক আন্দোলন হোক, কোথাও আগুন লাগলে, ভিআইপি দের দেখাশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুই তাদের করতে হয়। এবং তারা খুব ভালো কাজ করে। আমাদের এখানে অনেক পুলিশ আধিকারিক আছেন, যাদের অন্যান্য যে কোনও রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করলে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন, এরা আমাদের সম্পদ। আমরা ওনাদের নিয়ে গর্বিত।
ট্রাফিক পুলিশদের জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। ঝড়, জল, বৃষ্টি যাই হোক, তারা সমানে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের অস্বাচ্ছন্দ্যকে উপেক্ষা করে কর্তব্য পালন করেন। পুলিশের কাজ খুব কঠিন। আমরা যখন উৎসবে আনন্দ করি, তখন ওনারা রাস্তায় থেকে কর্তব্য পালন করেন। এরকম মানুষদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
সব জগতে কিছু খারাপ লোক থাকে, ভালো লোকও থাকে। ৯৯% ভালোদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এরা আছে বলে বাংলা চলছে। যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলে বাংলায় আইন শৃঙ্খলা নেই, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই শুধু শেষ বছর ধরুন, দুর্গাপুজোয় কত লক্ষ লোক আসে কলকাতায়? কত পুজো হয় সারা রাজ্যে? নথিভুক্ত ক্লাবের পুজোর সংখ্যাই ৪৮,০০০। এছাড়াও, অনেক পুজো হয়। কাজটা এত সহজ নয়। পারার ক্লাবদের নিয়ে প্রশাসন কাজ করে। একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা দেখাতে পারবেন? যারা এসব বলে তাদের লজ্জা করে না? তাদের মুখে লিউকোপ্লাস্টার লাগিয়ে দেওয়া উচিৎ। পুলিশদের এই কাজের দাম দেবেন না?
গঙ্গাসাগর মেলা। সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। কারণ, কুম্ভমেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, কেন্দ্রও অনেক টাকা দেয়। বাংলার গঙ্গাসাগর সড়ক দ্বারা যুক্ত নয়, জল পেরিয়ে যেতে হয়। এক জন এক জন করে মানুষকে পার করে নিয়ে যেতে হয়। ৪০ লক্ষ মানুষ এলেন, ৪০ লক্ষ মানুষ চলে গেলেন। একটা ছোট্ট কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। একবার বাহবা দেবেন না? একবার তাদের সম্মান দেবেন না?
ঈদের নামাজ পড়ে, কত লোক রাস্তায় নামে? কত পাড়ায় হয়? একটাও দুর্ঘটনা ঘটেছে বাংলায়? বড়দিনের উৎসবে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিশ্চিন্তে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কটা দুর্ঘটনা ঘটেছে? কেউ কেউ উত্তেজনা ছড়ায়। আগুন লাগানো খুব সহজ, নেভানো খুব শক্ত। একটি ব্রীজ ভেঙে গেলে পুলিশদের সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিতে হয়। আলোও লাগাতে হয়, উদ্ধারকার্যও করতে হয়। কোথাও আগুন লাগলে, রাতের পর রাত জেগে আগুন যতক্ষণ না নিয়ন্ত্রণে আসছে, উদ্ধারকাজ শেষ না হচ্ছে, পুলিশকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই ফোর্সটাকে ঘিরে সারা ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন।
আমরা ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে ১২৫টির মত নতুন থানা হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা থানার সংখ্যা প্রায় ৪৫-৪৬টি। সাইবার ক্রাইম ষ্টেশন হয়েছে। উপকূল থানা হয়েছে। সিবিআই কোর্ট তো আমরাই করে দিয়েছি। ১৯টি মানবাধিকার কোর্ট হয়েছে বাংলায়। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট হয়েছে। ১লক্ষ ২০ হাজারের বেশী সিভিক ভলেন্টিয়ার নেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজার কন্সটেবল, হোমগার্ড নিয়োগ হয়েছে, আরও অনেক নিয়োগ হচ্ছে।
সিভিক ভলেন্টিয়াররা প্রথমে ৩০০০-৩৫০০ টাকা পেত। এখন তাদের মাইনে বেড়ে ৮০০০ টাকা হয়ে গেছে।
আগে একজন পুলিশ অফিসার ডিউটি করার সময় মারা গেলে তাকে কেউ সাহায্য করত না, কিন্তু এখন যদি কেউ ডিউটি করার সময় মারা যায় আমরা তাদের পরিবারকে চাকরি দিই।
আজকের এই ধর্না মঞ্চ রাজনৈতিক নয়, আমাদের পুলিশকে যদি কেউ অসম্মান করে, তার কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, কোন কারণ ছাড়া, সঠিক তথ্য ছাড়াই তার বাড়িতে যায় তাহলে আমার প্রতিবাদ করার প্রয়োজন ছিল কারণ প্রত্যেক মানুষের একটা সম্মান আছে, একটা নিজস্বতা আছে।
দিল্লীতে বসে ওরা নিজেদের বড় নেতা মনে করে আর ভাবে আমরা রাজ্যের ছোট নেতা, গিয়ে ওদের গ্রেফতার করে আসি। দিল্লীর পুলিশকে আমি সম্মান করি, তাদের পরিবারও আমার পরিবার।
কোনও একজনের ওপর আমার কোন রাগ নেই, আমার রাগ আছে এই ইনস্টিটিউশনগুলোর নষ্ট করার মেকানিজমের ওপর। আমার রাগ আছে ইনস্টিটিউশনগুলোকে অপব্যবহার করে একজন অফিসারের বিরুদ্ধে আর একজন অফিসারকে লেলিয়ে দেওয়ার জন্য, আমার রাগ আছে তাদের ওপর যারা রাজনৈতিকভাবে, প্রতিযোগিতায় মোকাবিলা করতে না পেরে যারা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে, অপমান করে।
মিথ্যে কথা বলে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেক আঘাত করা হয়েছে। আমাদের কেউ কোনোভাবে দায়ী নয়।
চিটফান্ড তৈরী হয়েছে ১৯৮০ সালে। তাহলে কেন ২০১১ সাল থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে? তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর চিটফান্ড এর মূল সুদীপ্ত সেনকে আমরাই গ্রেফতার করিয়েছিলাম, আগের সরকার করেনি।
আমরা একটা সিট তৈরী করেছিলাম, শ্যামল সেন কমিশন তৈরী করে আড়াইশো-তিনশো কোটি টাকা ফেরত দিয়েছিলাম, যারা এই কাজ করলো তাদের রাতারাতি ওরা চোর বানিয়ে দিয়েছে।
আমায় চোর বলছে, আমি কার টাকা নিয়েছি? আসল চোরেরা ধরা পড়ে না আর যারা সৎ ভাবে কাজ করতে চায় তাদের যদি কোন প্রমান ছাড়াই চোর বলে সাব্যস্ত করা হয় আমি তার প্রতিবাদ করবো, আমার জীবন দিতে হলে আমি তাতেও রাজি, কিন্তু আমি কম্প্রোমাইজ করব না
তৃণমূল কংগ্রেসের অনেককে ওরা গ্রেফতার করেছে, আমি কিন্তু রাস্তায় নামিনি।
যে ফোর্স চালাচ্ছে তাকে ধরতে চলে এলো ওরা রবিবার রাতে। ওরা আমায় বারণ করেছিল, কিন্তু আমি নিজের বিবেকের তাগিদে এই যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে লড়াই করব তাতে আমার যা হয় হোক।
ওরা ৩৫৫, ৩৫৬ জারি করলে আমার ১৪৪ ধারা আছেওরা নো এন্ট্রি বোর্ড। এত সহজ না, আমরা প্রতিবাদ করব।
ফোর্সের সম্মান রক্ষার জন্য আজ আমি এই আন্দোলন করছি। অনেকে ফোন করে সমর্থন জানিয়েছে। সকলকে ধন্যবাদ জানাই এই মঞ্চ থেকেষ৷
সৌজন্য: AITC