করোনা মোকাবিলায় নয়া আইন চালুর ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন কড়া বার্তা

করোনা মোকাবিলায় নয়া আইন চালুর ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন কড়া বার্তা

কলকাতা: করোনা মোকাবিলায় এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট লাগু করল রাজ্য সরকার৷ সোমবার নবান্নে করোনাভাইরাস নিয়ে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার৷ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যই এই আইন লাগু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে ভারতের ১৩টি রাজ্যে এই আইন লাগু করা হয়েছে৷ এদিন পশ্চিমবঙ্গে এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট লাগু করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমে এই আইন চালু করার পক্ষে ছিলাম না৷ কিন্তু সোমবার সকালে আইসোলেশনে থাকা ১০ জন রোগী যে ভাবে ডিএমকে বিরক্ত করেছেন এবং চিকিৎসা না করিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাতে এই আইন লাগু করতে বাধ্য হলাম৷ তবে আমাদের দেখতে হবে এই আইনের যেন অপব্যবহার না হয়৷’’

সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যের স্কুলগুলির ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়৷ এদিন ‘রিভিউ’ মিটিং-এর পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ, রিয়্যালিটি শো এবং অডিটোরিয়ামগুলি ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আবারও বলেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ সর্দি-কাশি-জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান৷ বাংলা সুরক্ষিত আছে৷ তবে এখানে আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই৷ সারা বিশ্বের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা যা ছিল চতুর্থ বা পঞ্চম সপ্তাহে তা বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে৷ তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷  তিনি এ দিন জানান, রাজ্যে করোনারভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ২ লাখ পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কেনা হয়েছে। সঙ্গে কেনা হচ্ছে ২ লক্ষ মাস্ক। কেনা হচ্ছে ১০ হাজার থার্মাল গান। ৩০০ ভেন্টিলেশনের বরাতও দেওয়া হয়েছে৷

তিনি আরও জানান, এখনও পর্যন্ত ৩ লক্ষ ২৪ হাজার লোককে স্ক্রিন করেছি৷ এর মধ্য ৫ হাজার লোকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে৷ তারা ফের অসুস্থ হচ্ছে কিনা তা নজরে রাখা হচ্ছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে কল সেন্টারের নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ সেখানে ফোন করলে চিকিৎসকের পরামর্শ জানানো হচ্ছে৷ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখনও পর্যন্ত কল সেন্টারে ফোন করেছেন বলেও জানান তিনি৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় অনেকগুলি বর্ডার আছে৷ তাই বাংলাকে সতর্ক থাকতে হবে৷ বাংলাদেশে যাতাযাত বন্ধ রাখা হয়েছে৷ নেপালেও জরুরি অবস্থা ছাড়া যাতায়াত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলির উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, দয়া করে কোনও রোগীকে ফিরিয়ে দেবেন না৷ মানুষের সেবা করাটা আমাদের ধর্ম৷ আপনারা আপনাদের কর্মীদের জন্য পিপিই অর্ডার দিন৷ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখুন৷ প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতল তো আছেই৷ তিনি আরও বলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করতে ভয় পাবেন না৷ আমাদের মানবিক হতে হবে৷ শ্রমিকদেরও সুরক্ষার কথাও বলেছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে৷ হ্যান্ড স্যানেটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার করুন৷

এদিকে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ মহারাজকে ভক্তদের প্রণামের সুযোগ মিলবে না। বন্ধ থাকছে মঠের সমস্তরকম প্রসাদ বিতরণ। মন্দিরে পুজো ও আরতি দর্শনের সুযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এদিন মঠের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে জমায়েত না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 1 =