তিয়াষা গুপ্ত: মোটেই সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মোদী-শাহদের। অন্তত ৫ রাজ্যে ভোটের ফলের ভিত্তিতে একথা চোখবুজে বলা যায়। এদিন গতি পেল বিজেপির রথ। সেই রথে ভর করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শুরু হবে নতুন করে ধাবমান হওয়ার চেষ্টা। বিজেপির কথায় সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছে।
ব্যতিক্রমী নিয়মের বালাই – নাম কাশ্মীর, এবার রাষ্ট্রপতির শাসন উপত্যকায়
বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় আজও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের রথের চাকা ঘোরাতে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপির জাতীয় পরিমণ্ডলে খুশির আবহ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জোটলি রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর মতে, বিজেপি এরকমভাবে বিরোধী কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টা করলে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বলে অনেকেই চেঁচাতেন। এখন সবাই চুপ কেন। খুশি চেপে রাখেননি কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
বিজেপির রথযাত্রায় ঠিক কী কী শর্ত চাপাল হাই কোর্ট?
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এ রাজ্যকে প্রথম থেকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে তাঁরা আসরেও নেমেছেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দীলিপ ঘোষ তো এও বলেছিলেন, রথই হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার।
সুজজ্জিত রথ তৈরি রাজ্য পরিক্রমা করতে। তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীরা যোগ দেবেন এই রাজসূয় যজ্ঞে। সূত্রের খবর, রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে নীতিন গড়কড়ি, নির্মলা সীতারামন, যোগী আদিত্যনাথ, উমা ভারতী, গিরিরাজ সিং এই রথযাত্রায় শামিল হতে পারেন। তালিকাটা আরো চওড়া হওয়ার কথা। হাই কোর্টের রায়ে বিজেপির মরা গাঙে যেভাবে খরস্রোত বয়ে গেল তাতে এই প্রচার অভিযানে জাতীয় রাজনীতির রঙ লাগতে বাধ্য।
‘উন্নয়নের জোয়ারে’ও মমতার শহরে বাড়ছে ‘গরিবে’র সংখ্যা
পশ্চিমঙ্গকে এভাবে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ আছে। প্রথমত, ২০১৬ সালের পর থেকে বিভিন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। অনেকটাই কংগ্রেস ও সিপিএমকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিজেপি। তাই ১৯-এ এই রাজ্যকে মোদী-শাহরা যে পাখির চোখ করবেন তা বলাই যায়। এর আগে অমিত শাহ এই রাজ্যে এসে বলেছিলেন, ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২টিতে জেতা বিজেপির লক্ষ্য।
সিনিয়র এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, ১৯-এ বিজেপির লক্ষ্য বালুরঘাট, কোচবিহার, অলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর মালদা, পরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম কৃষ্ণনগর ও মেদিনীপুরে কিছুটা আসন বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে রথকে আশ্রয় করে হালে পানি পেতে চাইছে বিজেপি। রাজস্থানেও বসুন্ধরা রাজে রথ ছুটিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ তো হল না। তাই এবার পশ্চিমবঙ্গে রথকে আশ্রয় করে বিজেপি কতটা স্কোর করতে পারবে, তা সময় বলবে।
প্রত্যেক নাগরিকের অ্যাকাউন্টেই ঢুকবে ১৫ লক্ষ টাকা, দাবি কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর
রথ নিয়ে জল সুপ্রিম কোর্টেও গড়িয়েছিল। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ রথযাত্রা পিছিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।তার বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চ আপিল মামলার শুনানি হয়। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বিজেপির ৩ সদস্যের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের ডি জি কে আলোচনায় বসতে হবে। তারপর ১৪ ডিসেম্বর রাজ্যকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এই অবস্থায় রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবার আঁচ পেয়েই পদক্ষেপ বিজেপির। রাজ্য মনে করে রথযাত্রা আসলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি। তাই আলোচনা অবান্তর। রাজ্য সরকারের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা আঁচ করে আগেভাগে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে বিজেপি। বিজেপি সভাপতি আগেই হুঙ্কার ছেড়েছেন রথযাত্রা হবেই। হাই কোর্টে এদিনের রায়ে তাই অক্সিজেন পেলেন শাহরা।
রথ যাত্রার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নতুন নয়। অতীতে ও ভোট যুদ্ধ পেরোতে রথ কে আশ্রয় করেছে বিজেপি। এবারও সেই ধারাই বজায় রাখলেন মোদী-শাহরা। রথকে আঁকড়ে ১৯ পার করতে চান অমিত শাহ। এবার রথের গতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেই দিকেই নজর গোটা দেশের।