কলকাতা:লাগাতার লক ডাউনের ফলে রোজগার হারিয়ে বা সঙ্কুচিত হওয়ার ফলে এমনিতেই প্রবল সংকটে রাজ্যবাসী। এবার কার্যত মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা নামলো তাদের ঘাড়ে। অবশ্য এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন লকডাউনের মধ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়া বাস মালিকেরাই বাড়িয়ে নেবেন তাঁদের ইচ্ছামতো। রাজ্য সরকার সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। তার পর থেকেই বাংলায় জুড়ে ছেয়েছিল আশঙ্কা, কার্যত সেটাই এবার সত্যি হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এক বৈঠক করে জানিয়ে দেয় কলকাতায় বাস বা মিনিবাসের ক্ষেত্রে নূন্যতম ভাড়া হচ্ছে ২০ টাকা। জেলায় তা থাকতে পারে ১৫টাকা। এরপর থেকে প্রতি স্টেজে বাড়বে ৫টাকা করে।
জানা গিয়েছে, কলকাতায় বাসে উঠলেই গুণতে হবে ২০টাকা। তাতে যাওয়া যাবে ৪কিমি। পরের ৪কিমির জন্য গুণতে হবে ২৫টাকা। তারপর থেকে প্রতি স্টেজে বেড়ে যাবে ৫টাকা করে। ২০কিমির পর থেকে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা করে ভাড়া বাড়বে। বাস হোক বা মিনিবাস সব ক্ষেত্রেই এই ভাড়া চালু হচ্ছে। জেলার ক্ষেত্রে নূন্যতম ভাড়া হচ্ছে ১৫ টাকা। তারপর সেখানেও ওই একই ভাবে প্রতি স্টেজে ৫টাকা করে ভাড়া বাড়বে। তবে কোথাও স্টেজ ভাঙ্গা হচ্ছে না, নতুন কোনও স্টেজ তৈরি করাও হচ্ছে না। যদিও রাজ্যবাসী খুব ভালোভাবেই জানেন প্রতিবার যখনই ভাড়া বাড়ে তখনই স্টেজেও ভাঙা গড়া চলে কার্যত বেআইনি ভাবেই। সরকারের তরফে ১টাকা ভাড়া বাড়ানো হলেও কোথাও কোথাও তা ২টাকা মায় ৩টাকাও বেড়ে যায়। তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের কন্ড্রাক্টরদের যেমন বিবাদ বাধে তেমনি বিবাদ বাধে বাসযাত্রীদের মধ্যেও।
উল্লেখ্য, লকডাউনের আগে কলকাতায় বাসের নূন্যতম ছিল ৭টাকা, মিনিবাসে ৮টাকা। জেলায় সেই ভাড়া ছিল ৬ টাকা। যদিও এই ভাড়া বৃদ্ধির জের পড়ছে না সরকারি বাসে। কেননা সেখানে পুরাতন ভাড়া মেনেই বাস চালানো হচ্ছে। আর এই জায়গাতেই উঠছে প্রশ্ন। বাস মালিকেরা একলাফে নিজেদের ইচ্ছামতো যেভাবে বাস ভাড়া বাড়ালেন তাতে আদৌ যাত্রী মিলবে তো? যে পথে ৭টাকার সরকারি বাসযাত্রার সুযোগ রয়েছে সেখানে ২০টাকা খরচ করে আদৌ কেউ উঠবেন তো? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, লকডাউনে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, কোনওমতে দুইবেলা খেয়ে বেঁচে রয়েছেন, তাঁরা পারবেন তো এই বাস ভাড়া বহণ করতে? রাতারাতি এই ভাড়াবৃদ্ধি চূড়ান্ত পাশবিক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত হয়ে অক্ষয় হয়ে থাকবে না তো? আর প্রশ্ন কতদিন এই ভাড়া নেওয়া চলবে? আদালতে এনিয়ে মামলা দায়ের হলে সেখানে যদি আদালত ভিন্ন নির্দেশ দেয় তখনই বা কী হবে? এতগুলো প্রশ্ন কিন্তু এখনই উঠে গিয়েছে, ভবিষ্যত কিন্তু আরও প্রশ্ন তুলবে।