স্বামীকে স্কুটিতে বসিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছল নববধূ, লকডাউন পর্বে নয়া জীবন

স্বামীকে স্কুটিতে বসিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছল নববধূ, লকডাউন পর্বে নয়া জীবন

উলুবেড়িয়া: মন মানে না!  লকডাউন, কিন্তু তাতে কি? ‘অমর প্রেম’-কে ‘সাত পাকে বাঁধা’ দিতে মন্দিরেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন হাওড়ার দীপায়ন ও পিয়ালি। লকডাউনের মাঝে বিয়ে কী করে হবে, তা নিয়ে যখন চিন্তায় পরিবার-পরিজনেরা, তখন অনিশ্চয়তাকে তুড়ি মেরে গাটছড়া বেঁধে ফেললেন তাঁরা৷ 

বাপের বাড়িকে বিদায় জানিয়ে পালকি চেপে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার রেওয়াজ এখন অতীত৷ ঝাঁ চকচকে ফোর হুইলারই এখন হালফিলের ফ্যাসন৷ কিন্তু এসবের পরোয়া নেই তাঁদের৷ হাওড়ার এক মন্দিরে বিয়ের পর স্বামীকে স্কুটিতে চাপিয়ে সোজা শ্বশুরবাড়িতে হাজির হলেন নববধূ। এদিকে, লকডাউনের গেরোর মাঝেই বিয়ে সুসম্পন্ন হওয়ায় বেজায় খুশি বর ও কন্যাপক্ষ।

উদয়নারায়ণপুরের প্রতাপচকের বাসিন্দা দীপায়ন পাত্র পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী৷ গজার বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পিয়ালি মাইতির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় তাঁর৷ গত ২২ জানুয়ারি রেজিষ্ট্রিও হয় তাঁদের৷ ঠিক হয় আগামী ৩ মে শাস্ত্রমতে সামাজিক অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে। সেইমতো আত্মীয় পাড়াপ্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণও শুরু করে দিয়েছিলেন দুই বাড়ির লোক৷ কিন্তু বাধ সাধল লকডাউন৷ প্রধানমন্ত্রী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতেই মাথায় পড়ে হাত দুই বাড়ির৷ নতুন করে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেন দীপায়ন ও পিয়ালি। অতঃপর দুই বাড়ির সম্মতিতেই সিদ্ধান্ত হয়, মন্দিরে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে। সোশ্যাল ডিস্টেনসিং মেনেই হবে বিয়ের অনুষ্ঠান৷ তাই কাউকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে সোমবার মা গজাই চণ্ডীতলার মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন দু’জনে। সঙ্গে ছিলেন দুই বাড়ির একজন করে সদস্য। অতিথি সমাগম বাদে, মন্ত্রপাঠ, সিঁদুরদান, মালাবদল সবই হয়েছে নিয়ম মেনে। 

এ প্রসঙ্গে দীপায়ন বলেন, রেজিস্ট্রির পর ৩ মে বিয়ের দিন ঠিক হয় এবং সেইমতো সমস্ত প্রস্তুতিও সারা হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আমরা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। লকডাউন চলায় অতিথিদের আপ্যায়ন করা সম্ভব হয়নি৷ রাতে মন্দিরে বিয়ে করার সময় আমরা সতর্ক ছিলাম, যাতে জমায়েত না হয়। 

অন্যদিকে পিয়ালি বলেন, পরিস্থিতির চাপে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু সকলের আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে থাকবে। খুব দুর্ভাবনায় ছিলাম। এমন একটা সময়ে আমরা কীভাবে নতুন জীবন শুরু করব! আমরা দু’জনে মিলে ঠিক করেছি, অনুষ্ঠান করলে যে টাকাটা খরচ হতো, তার কিছুটা অংশ দিয়ে দুঃস্থ মানুষদের খাওয়াব। বাকি যে অংশটুকু থাকবে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করব।  বিয়ের পর স্কুটির নিয়ে পিয়ালি যখন শ্বশুরবাড়ি হাজির, তখন বরণডালা সাজিয়ে তৈরি পাত্রপক্ষের লোকজন৷ নাই বা বাজল বিয়ের সানাই, উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজে শুভ সূচনা হল নতুন জীবনের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × one =