নয়াদিল্লি ও কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়সড় ধাক্কা৷ কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ ইস্যুতে কড়া নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত৷
আদালত সূত্রে খবর, আগামী ১০ দিনের মধ্যে কলকাতা পুরসভায় নির্বাচনে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে হবে৷ কলকাতা পুরসভায় ভোট করাতে ১০ দিনের মধ্যে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷ আর ৭ দিনের মধ্যে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা গেলে পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করবে সুপ্রিম কোর্ট৷ আজ এমনই নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷
কলকাতা পুরসভা কবে নির্বাচন হবে তা আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যেরকে জানানোর নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতি মহেশ্বরী বিচারপতি রায় এবং বিচারপতির পলের বেঞ্চ চূড়ান্ত সময়সীমা বেধে দেয় রাজ্য সরকারকে। ১০ দিনের মধ্যে রাজ্য সরকার যদি কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের দিন করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবেন এবং কলকাতা পুরসভার নতুন প্রশাসক বসাবেন বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
মামলার শুনানিতে বিকাশ সিং আদালতে জানিয়েছিলেন, পুরআইন অনুযায়ী কলকাতা পুরনিগমের ক্ষেত্রে এভাবে প্রশাসক বসানো যায় না৷ অন্যান্য পুরসভায় প্রশাসক বসানো গেলেও পুরনিগমের ক্ষেত্রে তা আইন বিরুদ্ধ৷ তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির জন্য এই পরিস্থিতিতে পুরভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে ফিরহাদ হাকিমকে প্রশাসক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য নির্বাচন কমিশনও এটাকে সমর্থন করেছে যা ‘অসাংবিধানিক’! গত ৬ মে রাজ্যের যে দফতরর থেকে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে সেই দফতরেরই নিযুক্ত প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম? তা কি করে হয়! এটাও সম্পূর্ণ নিয়ম বিরোধী বলে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার আর্জি জানানো হয়৷
আদালত সূত্রে খবর, কলকাতা পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রশাসনের কাজ চালিয়ে যেতে প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার৷ অভিযোগ, নির্বাচন না করিয়ে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়৷ কলকাতা পুরসভার ১৯৫৮ সালে আইন অনুযায়ী ৫ বছর অন্তর ভোট হওয়ার কথা৷ অভিযোগ, সেই আইন লঙ্ঘন করে কলকাতা পুরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগ করা হয়৷ নির্বাচন না করিয়ে কলকাতা পুরভায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা৷ কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় কিছুটা স্বস্তি মেলে রাজ্যের৷ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পুরসভার কাজ যাতে থমকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসক বসানো রাজ্যের সদ্ধান্তে সম্মতি দেয় হাইকোর্ট৷ ৬ মাস সময় দেয় আদালত৷ সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, কলকাতা পুরসভার প্রশাসকের মেয়াদ আরও ৩ মাস বাড়িয়ে দেওয়ার ছাড়পত্র দেয় আদালত৷ কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় মামলা৷ ওই মামলার শুনানিতে আজ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ আগামী ১০ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি৷ তারমধ্যে কলকাতা পুরনিগম নিয়ে রাজ্য সরকার কী চিন্তাভাবনা বা সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ সুতরাং তার মধ্যেই রাজ্য সরকারকে কলকাতা পুরনিগম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ আইন অনুযায়ী, পুরো ভোটের মেয়াদ শেষের আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করে নয়া বোর্ড গঠন করতে হয়৷
কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আগেই দায়ের হয়েছিল মামলা৷ পুরসভায় বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গত মে মাসে মামলা দায়ের করেছেন শরৎকুমার সিংহ নামের এক ব্যক্তি৷ পুরসভায় বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ নিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারিভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্য৷ সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়৷ ভোট না করিয়ে কীভাবে পুরসভায় প্রশাসক বসানো হল, তা জানতে চেয়ে সরব হয়েছিলেন খোদ রাজ্যপাল৷ রাজ্যপালের টুইট ঘিরে কম বিতর্ক হয়নি৷ এবার সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ, বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷