কলকাতা: করোনা আবহে দীর্ঘ লকডাউনে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন৷ একের পর এক সংস্থায় চলছে কর্মী ছাঁটাই৷ এই অবস্থায় নতুন কর্মসংস্থান দূরস্ত৷ অত্যন্ত সংকটের মধ্যে পড়েছেন রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরাও৷ চলছে না তাঁদের সংসার৷ অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে তিতিবিরক্ত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা৷ দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে তাঁদের৷ প্রার্থীদের মধ্যে জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন৷ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা৷
এই পরিস্থিতিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে৷ বাড়ি থেকেই চলছে এই কর্মসূচি৷ কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার বিদ্রোহ করছেন, কখনও বা মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর ওয়ালে গিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। এবার তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ হল নতুন মাত্রা৷ গণ ই-মেল কর্মসূচি নিলেন প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা৷ কোনও সরকারি দফতর, শিক্ষামন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নয়, ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছে।
শুক্রবার দুই প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী শেখ নাসিম আহমেদ ও হাসিবুল রহমান মণ্ডলের উদ্যোগে ৫০০ জনেরও বেশি টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছে ই-মেল পাঠান৷ দীর্ঘদিন ধরে ডিভিশন বেঞ্চে ঝুলে থাকা প্রাথমিক টেট পাশ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত মামলার (MAT/808/2019) দ্রুত নিস্পত্তির আর্জি জানান তাঁরা।তাঁদের দাবি, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নোটিফিকেশনে টেট পাশ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও, সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি৷ যা NCTE নিয়মেরও পরিপন্থী৷ NCTE-র নিয়মে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, আছে একবার টেট পাশ করলে, উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সার্টিফিকেট দিতে হবে৷ এই সার্টিফিকেটের মেয়াদ থাকবে ৭ বছর। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দুর্ণীতি লুকোতে নিজেদের কথার খেলাপ করছে৷ কোনও টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীকে সার্টিফিকেট না দিয়ে NCTE নিয়ম অগ্রাহ্য করা হচ্ছে৷
পরবর্তী সময়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে বহু প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত বছর ৮ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট পিটিশনারদের পক্ষে রায় দেয়৷ ২ মাসের মধ্যে পর্ষদকে টেট সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবেই সময় পার করানোর জন্য ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করে পর্ষদ৷ দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই মামলাটিকে ঝুলে রয়েছে৷ সরকার যদি প্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তাহলে কেন এত টালবাহানা চলছে? প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রার্থীদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? শুক্রবার এই প্রতিবাদ জানিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টারের কাছে গণ ই-মেল পাঠান বিক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা৷ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান তাঁরা৷