প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে গণ ই-মেল প্রার্থীদের, অতিষ্ঠ প্রশাসন!

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে গণ ই-মেল প্রার্থীদের, অতিষ্ঠ প্রশাসন!

 

কলকাতা:  প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানার অভিযোগে আজ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গণ ই-মেল পাঠাল মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাইমারি উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা৷ ২০০৯-২০১০ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জেলাভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও রাজ্যের সমস্ত জেলায় নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রাথমিক শিক্ষক উত্তীর্ণ (২০০৯) ঐক্যমঞ্চ। এদিন গণ ই-মেলের মাধ্যমে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি পেশ করেন তাঁরা৷ 

এই চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, অন্যান্য জেলায় নিয়োগ সম্পন্ন হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং মালদা জেলার জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি সরকার। ধরনা, অনশন, আন্দোলনের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় গণ-প্রতিবাদেও কোনও সদুত্তর পাননি তাঁরা। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরে গণ-ই-মেল কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (২০০৯) ঐক্যমঞ্চ। 

২০০৯ সালে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল৷  ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার পরীক্ষা ও নিয়োগ হয়ে গেলেও তিন জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যায়৷ গত ১০ বছর থেকে নিজেদের দাবি জানানো সত্ত্বেও বর্তমান সরকার ২০০৯-২০১০ প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১০ সালের শেষের দিকে তৎকালীন রাজ্য সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যে পরীক্ষা নিয়েছিল, তাতে ১৪টি জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরে বাকি ৫ জেলার নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছিল তৃণমূল সরকার। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালে ওই ৫টি জেলার জন্য আলাদা করে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছিল তৃণমূল সরকার। তবে পরীক্ষা হওয়া সত্ত্বেও এখনও নিয়োগ হয়নি। ২০১৫ সালে পূর্ব মেদিনীপুর ও ২০১৬ সালে হাওড়া জেলায় নিয়োগ হলেও,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং মালদা জেলার চাকরিপ্রার্থীরা আজও কোনও সুরাহা পাননি। 

২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ ১৪ দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন৷ কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা সেই রায় মানেনি। ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি পুনরায় পুনর্বিবেচনার জন্য সিঙ্গল বেঞ্চে পাঠায়। ২০২০ সালে এই মামলা বিচারপতি তপোব্রতর বেঞ্চে চলে আসে৷ সেখান থেকে সরকার যায় সুপ্রিম কোর্টে৷ এর আগে নিজেদের দাবি জানানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন তাঁরা। ধরনা, অনশন, পথ অবরোধ, ব়্যালি ছাড়াও শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবন, বিকাশভবন, নবান্ন, জেলা প্রাথমিক দফতরে ডেপুটেশন জমা করেও মেলেনি সদুত্তর। এর পরেই  শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরে গণ-ই-মেল পাঠান চাকরি প্রার্থীরা৷ 

গণইমেল কর্মসূচির জেরে ব্যতিব্যস্ত প্রশাসন৷ গণ ই-মেলের ঠেলায় শিক্ষা দফতরের তরফে আন্দোলনকারীদের ফোন করে গণ ই-মেল কর্মসূচি বন্ধ করার আর্জি জানানো হয়েছে৷ দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা৷ দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান, চাকরি প্রার্থী বাপন ঘোষ, ওয়াশিম আখতার, আক্রাম আলি ও অরিন্দম মণ্ডল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 11 =