কলকাতা: সারা রাজ্যের বি-এড পাশ কয়েক লাখ চাকরীপ্রার্থী যাদের কেউ কেউ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে আজ তীব্র বঞ্চনার সামনে উপস্থিত, সামনে অনাহুত ভবিষ্যৎ, ২৯ সেপ্টেম্বর সারা রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানে নামে WEST BENGAL SLST CANDIDATES ASSOCIATION এবং WEST BENGAL TEACHER’S JOB ASSOCIATION। কিন্তু এর পরেও সরকারের বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি! তাই ২৪ শে নভেম্বর কলকাতার রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকশ’ বঞ্চিত যুবক যুবতী। সারা রাজ্যের ভাবী শিক্ষকরা রাজপথে নামতে চলেছে নবম থেকে দ্বাদশে ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এই দাবী নিয়ে। তাদের বক্তব্য, ভোটের আগে লোভ দেখানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নয়, সম্পূর্ণ নিয়োগ চাই! তাই গোটা রাজ্যের সমস্ত বেকার যুবক যুবতীদের যারা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এতদিন লড়াই করেছেন, নবম – দ্বাদশ SLST র জন্য যোগ্য তারা আসুন, অগ্রগামীদের হাত মজবুত করুন, আমার আশা জয়ী হবেন আপনারাই।
মুলত, ৫ দফা দাবি রয়েছে তাদের। ১. ২০২০ এর মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০২১ বিধানসভা ভোটের মধ্যে নবম থেকে দ্বাদশের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা৷ ২. সমস্ত আপডেটেড শূন্যপদে নিয়োগ করতে হবে। ৩. শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক এবং MCQ এর মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো। ৪. সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে OMR SHEET এর কার্বন কপি দিতে হবে। ৫. প্রতি বছর যাতে এসএসসি হয়, তার জন্য আদর্শ রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।এছাড়াও তারা প্রশ্ন তুলছেন, নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কোনো রকম আইনি জটিলতা নেই, তাহলে কেন নতুন করে নোটিফিকেশন সরকার দিচ্ছে না? যতবার তারা শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের সাথে যোগাযোগ করেন ততবার তাদের বলা হয় আইনি জটিলতা বা কেন তারা এই বিশেষ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন? আচ্ছা তাহলে তারা বিএড করলেন কেন? স্টেথোস্কোপ গলায় ঝোলানো কোনো ভাবী চিকিৎসককে তো শুনতে হয় না স্কুলে শিক্ষকতা করতে বলার কথা! কেন?
২০১৫-তে শেষবার ফর্ম ফিল আপের সুযোগ এসেছিলো! তখনও অনেকেই স্নাতক হয়ে ওঠেনি। তারপর ২০১৬-তে শেষবারের জন্য পরীক্ষা হলো। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত, অথচ এই পাঁচ বছরেই স্নাতক-স্নাতকোত্তর করে বিএড পাশের সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ লাখে পৌঁছে গিয়েছে। সরকারের উদাসীনতায় শিক্ষিত বেকাররা যেমন বঞ্চিত, তেমনই বঞ্চিত প্রান্তিক গ্রামের শিক্ষার্থী, তার পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়তে না পেরে, কারণ – শিক্ষকের অভাবে প্রথমে বিষয় উঠে যায়, তারপর একদিন গোটা স্ট্রিমটাই! এদিকে শিক্ষকতার চাকরী তো দূর, ফর্ম ফিলআপ করতে গেলেই বি.এড ডিগ্রী বাধ্যতামূলক, এমন এক ডিগ্রী যার কদর কেবল শিক্ষকতার ক্ষেত্রেই, এমন এক ডিগ্রী যা করতে অনেকেই জমি বেচেছেন, সুতরাং এমন একটা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে শিক্ষকতার চাকরীর জন্য একটা পরীক্ষাতে বসতে না পাওয়াটা চূড়ান্ত হতাশাজনক ব্যাপার। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরও অনেকে পাঁচ বছর, কেউ দু বছর বসে আছেন। বেকার শিক্ষিত যুবকরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও ফল মেলে না, কখনো কমেন্ট বক্স অফ করে দেওয়া হয়, কখনো বা ব্লক করে দেওয়া হয়! ডি আই অফিসে ডেপুটেশন কর্মসূচি পালনের পরও সদুত্তর মেলে না, মেলে শুধু একরাশ প্রতিশ্রুতি! করোনার কারণে রাজ্যের অর্থ দপ্তর ফলাও করে জারি করা বিজ্ঞপ্তির দিনক্ষণ পিছিয়ে দেয়, নতুন নিয়োগ হবে না ২০২১-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত, অথচ খয়ারতি দান চলতেই থাকে বাংলার পুজো কমিটিদের। আর এক্ষেত্রে অনুমোদন? নৈব নৈব চ!