সত্যিই কি শুভেন্দুকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি করা হবে? ঘুরে দাঁড়াতে শুভেন্দুই বাজি?

সত্যিই কি শুভেন্দুকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি করা হবে? ঘুরে দাঁড়াতে শুভেন্দুই বাজি?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ফলাফলে খুশি নন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের শক্তি অনুযায়ী কাঙ্খিত ফল আসেনি বলেই তাঁরা মনে করছেন। বিশেষ করে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গে দলের আরও ভাল ফল আশা করেছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে সেই প্রত্যাশার ধারে কাছে যেতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে রাজ্য সভাপতি পদে শুভেন্দু অধিকারীকে আনা হবে বলে নতুন করে জল্পনা ছড়িয়েছে। সোমবার রাতে দিল্লিতে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে পঞ্চায়েতের ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনটাই খবর।

 

আর দশ মাস পর লোকসভা নির্বাচন। জেতা আসন ধরে রাখার পাশাপাশি আরও বহু আসন টার্গেট করে এগোচ্ছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা, তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে লড়তে গেলে সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়াতে হবে। দিল্লিতে সোমবার কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সেই বৈঠকে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। আর সেই সূত্রে জানা যাচ্ছে লোকসভার আগে শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করে বড় চমক দিতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

 

কিন্তু প্রশ্ন হল শুভেন্দুকে যদি সত্যিই রাজ্য সভাপতি করা হয়, তাহলে রাতারাতি কি বিজেপি সাংগঠনিকভাবে অনেকটা এগিয়ে যাবে? শুভেন্দুকে এই পদে বসালে বিজেপির কোনটা ‘প্লাস’ আর কোনটা ‘মাইনাস’ হবে, সেটা নিয়ে যথারীতি চর্চা শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির কিছুটা হলেও ভাল ফল হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। শুভেন্দুর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে তৃণমূলকে কিছুটা হলেও পিছনে ফেলে দিতে পেরেছে বিজেপি। আর গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে সাধ্যমতো টক্কর দিয়েছে বিজেপি। সেই সূত্রে লোকসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করলে গোটা বাংলা জুড়ে আন্দোলনে নতুন করে প্রাণসঞ্চার হবে বলে রাজনীতি কারবারিদের একাংশ মনে করছেন।

 

কারণ বাংলার প্রতিটি জেলায় শুভেন্দুর ব্যক্তিগত সংগঠন আছে। সেই ‘টিম শুভেন্দু’ হাতে হাত ধরে মাঠে নামলে ছবিটা কিছুটা হলেও বদলাতে পারে। কারণ বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যেভাবে ব্লকে ব্লকে সংগঠন তৈরি করেছেন, যাদের বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন তাঁদের অনেকেই তার যোগ্য নন বলে অভিযোগ উঠছে বহুদিন ধরেই। সেই জায়গা থেকে শুভেন্দুকে দায়িত্ব দিলে সাংগঠনিকভাবে রাজ্য বিজেপি শক্তিশালী হবে বলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। আসলে নন্দীগ্রামে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে শুভেন্দুর গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করার ক্ষেত্রে বাধা একটাই, সেটা হল তিনি বিজেপির আদি নেতা নন। সাধারণ ভাবে সংঘ পরিবার থেকে উঠে আসা নেতাদেরই বিজেপি রাজ্য সভাপতি করে। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। কিছুদিন আগেই একাধিক রাজ্যে সভাপতি পদে বদল এনেছে বিজেপি।

 

সেখানে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যারা যোগদান করেছেন তাঁদের রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। সেই যুক্তিতে শুভেন্দুকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে বসালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে শুভেন্দুকে এই পদে বসালে কিছু ‘মাইনাস পয়েন্ট’ও দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুগামীরা বেঁকে বসতে পারেন। নতুন করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। তাই শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি পদে বসালে দিলীপ-সুকান্তের কতটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। শুধু তাই নয়, রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার ক্ষমতা শুভেন্দুর ততটা নেই। তাই শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করলে বঙ্গ বিজেপির প্লাস-মাইনাস দুটি এফেক্টের দিকেই স্বাভাবিকভাবেই নজর রাখতে হবে। এই আবহের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব শুভেন্দুকে আরও বড় দায়িত্ব দেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + twelve =