suvendu
নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসতে চলেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ডায়মন্ড হারবার, অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রটি। কারণ একটাই, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ডায়মন্ড হারবারে অভিষেককে হারানোর হুঙ্কার দিয়েছেন। একই ভাবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী নিজেই ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁকে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাই ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল জয় পেলেও নন্দীগ্রামের মর্যাদার লড়াইতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার বিরোধী দলনেতা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেবেন তিনি। শুভেন্দুর হুঙ্কার,”ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ হয়েছে। ক্ষমতা থাকলে কাঁথি, তমলুকে আসুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার হারাব। বলে বলে হারাব। গুনে গুনে তমলুকে দেড় লক্ষ আর কাঁথিতে তিন লক্ষ ভোটে হারাব। ডায়মন্ড হারবারে ভাইপোকে হারাব। অন্য লোককে দাঁড় করিয়ে হারাব। বিজেপিকে জেতাব। আবারও বলছি ভাইপোকে হারাবো, হারাবো, হারাবো।” আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুভেন্দু একথা বলার পরদিনই একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী একই কথা বলেছেন। রবিবার তিনি বলেন,”আমি ডায়মন্ড হারবারের বর্তমান সাংসদকে প্রাক্তন সাংসদ বানাব। দল অনুমোদন দিলে আমি ডায়মন্ড হারবার থেকে লোকসভা ভোটের জন্য লড়াই করব।” সেই সঙ্গে নওশাদের দাবি, অভিষেকের অনুগামী নেতাকর্মীদের একাংশ বহুদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আর সেই সূত্রেই আইএসএফ বিধায়ক মনে করেন ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের হার কার্যত সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দুর পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত চরিত্র নওশাদ সিদ্দিকী যেভাবে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেককে হারানোর ডাক দিয়েছেন, তাতে রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ যে বহুগুণে বেড়ে গেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে জল্পনা বেড়েছে শুভেন্দুর বিশেষ মন্তব্য নিয়ে। তিনি বলেছেন অন্য কাউকে দিয়ে হারাব। তাই প্রশ্ন উঠছে, অন্য কেউ বলতে তিনি কী নওশাদ সিদ্দিকীকেই বুঝিয়েছেন? কারণ শুভেন্দুর এমন বক্তব্যের পরদিনই নওশাদ একই কথা বলেছেন। তাই এটা স্পষ্ট ডায়মন্ড হারবারে অভিষেককে হারানোর বিষয়টিকে এখন থেকেই পাখির চোখ করছে বিরোধীরা।
ঘটনা হল রাজ্য রাজনীতিতে বারবার চর্চায় উঠে এসেছে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার ‘মডেল’। সেখানে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, এই প্রচার বারবার করেছেন অভিষেকের পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্ব। পাল্টা বিরোধীদের দাবি, সেখানে সন্ত্রাস করে ভোটে জেতে তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ডায়মন্ড হারবার জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে ডায়মন্ড হারবার কার্যত তৃণমূলের দুর্গে পরিণত হয়েছে। গতবার অভিষেক ডায়মন্ড হারবার থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। তবে বিরোধীদের দাবি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে গতবারই অভিষেক হেরে যেতেন। রিগিং করে অভিষেক জিতেছিলেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় ভোট হলে অভিষেক হারবেন বলে দাবি বিরোধীদের। তাই শুভেন্দুর পাশাপাশি নওশাদ যেভাবে অভিষেককে হারানোর ডাক দিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।