মেধাবী ছাত্র থেকে নৃশংস খুনি! সুতপাকে খুনের আগে ফেসবুকে ইঙ্গিত দিয়েছিল সুশান্ত?

মেধাবী ছাত্র থেকে নৃশংস খুনি! সুতপাকে খুনের আগে ফেসবুকে ইঙ্গিত দিয়েছিল সুশান্ত?

বহরমপুর: প্রেমের সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান থেকে প্রতিশোধ৷ নৃশংস খুন৷ বহরমপুর ছাত্রী খুনের ঘটনায় পরতে পরতে লুকিয়ে প্রণয়ঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন৷ ভর সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারে মেস থেকে ডেকে এনে খুন করা হয় সুতপা চৌধুরীকে৷ এই ঘটনায় সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়ে অভিযুক্ত প্রেমিক৷ রাত ১০টা নাগাদ সমশেরগঞ্জের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মূল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ৷ 

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে কাজ! আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষা দফতর

ধৃত সুশান্ত চৌধুরীর বাড়ি মালদহের বলরামপুরে৷  কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে মালদহের গৌড় কলেজে পড়াশোনা করত সে। বিহারের পটনা শহরের হামেশাই যাতায়াত ছিল তার। কিন্তু, সেখানে সে ঠিক কী কাজে যেত, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। অন্যদিকে, নিহত সুতপা চৌধুরী ছিলেন মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় বারো বছর আগে মালদহের ইংরেজবাজার এলাকার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি তৈরি করে সুতপার পরিবার৷ এর পর থেকে সেখানেই থাকতে শুরু করেন তাঁরা৷ তবে কলেজের সুবিধার জন্য বহরমপুরের গোরাবাজারে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন সুতপা। অন্যদিকে, পড়াশোনার সুবিধা হবে বলে পিসি শান্তিরানি চৌধুরীর বাড়িতে থাকত সুশান্ত। শান্তিরানির বাড়ির খুব কাছেই ছিল সুতপার বাড়ি৷ সুশান্তের পরিবারের দাবি, এক পাড়ায় থাকার সূত্রেই সুশান্ত এবং সুতপার মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন শান্তিরানিও।

এদিকে, সোমবারের ঘটনা জানার পর সুশান্তের কাকিমা পুতুল চৌধুরী বলেন, ‘‘সুতপার সঙ্গে সুশান্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সুশান্ত সুতপাকে ভালবাসত। আমি জানি ওদের সম্পর্কটা বছর দুয়েকের। কিন্তু সুতপার পরিবার সুশান্তকে মেনে নেয়নি৷ ওর সঙ্গে বিয়ে দিতেও চায়নি। এমনকি, ক্লাবের ছেলেদের দিয়ে সুশান্তকে মারধর করিয়েছে। সুশান্তের ল্যাপটপও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। গতকাল খবরটা শোনার পরেই আমরা আতকে উঠি৷ ভাবতেই পারছি না কী ভাবে এমন কাণ্ড ঘটল। ছেলেটার জীবনটাই তো নষ্ট হয়ে গেল।’’

সুশান্তের বাবার নাম নিথিল চৌধুরী৷ তিনি পেশায় পুলিশকর্মী৷ নিউ জলপাইগুড়িতে কনস্টেবল পদে কর্মরত। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে সুশান্ত মেজ। সুশান্তের পরিবারের কথায়, সপ্তাহখানের আগেই বিহার থেকে বাড়ি ফিরেছিল সে। সোমবার ফের পটনা যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরোয়। জানা গিয়েছে, সুশান্তের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। তবে সুশান্তের দাদা শুভজিৎ চৌধুর জানান,  সম্পর্ক থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরেই সুতপা ভাইয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেছিল৷ যা ভাই সহ্য করতে পারেনি৷ মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিল।’’ 

আপাত শান্ত চেহারার সুশান্তের আড়ালে যে এমন ভয়ঙ্কর রূপ লুকিয়ে ছিল তা ভাবতেই পারছেন না শিক্ষক সুপ্রিয় মজুমদার৷ তিনি বলেন, ‘‘সুশান্ত এমন নৃশংস কাজ করতে পারে ভাবতেও পারিনি৷ শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না৷’’ তবে খুনের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিত দিয়েছিল সুশান্ত৷ খোলাখুলি সে লিখেছিল, ‘‘আমি ভারতীয়। এই বেওয়াফা তোর উপর একদিন অনেক ভারী পড়বে। এমনকী, তোর জান পর্যন্ত যেতে পারে ম্যাডামজি।” সঙ্গে ‘স্যাড’ ইমোজিও পোস্ট করে সুশান্ত। এই পোস্ট ঘিরেই তৈরি হয়েছে রহস্য৷ তবে কি চক্রান্ত করেই সুতপাকে খুন করে সুশান্ত? নাকি চরম পদক্ষের করার আগে প্রেমিকাকে সাবধান করতে চেয়েছিল৷ 

যদিও এই বিষয়ে এখনও কিছু বলতে চাইছে না পুলিশ৷ কারণ তদন্ত চলছে৷ তবে সুশান্তের দাবি, তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুতপা৷