বহরমপুর: বিগত কয়েকদিন ধরে বহরমপুরের কলেজ ছাত্রী সুতপা খুনের ঘটনাকে নিয়ে উত্তাল রাজ্য। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই অর্থাৎ ২ মে সোমবার প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করা হয় ওই কলেজছাত্রীকে। খুন করে তাঁরই প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আর তদন্তের কাজ এগোতেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসছে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের। এর আগেই জানা গিয়েছে, ‘খুনি’ সুশান্ত ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো এবং মেধাবী বলে পাড়াতেও তার যথেষ্ট নাম রয়েছে। কিন্তু প্রেমিকার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেনি সে। আর তার জেরেই নরকীয় হত্যাকাণ্ড। তদন্তকারীদের একাংশের কথায়, সুশান্ত উচ্চমাধ্যমিকে প্রতিটা বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে পাস করেছিল। কিন্তু সুজাতার বাড়ি থেকে সুশান্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কোনদিনই মেনে নেওয়া হয়নি। আর তার জেরেই একসময় সুশান্ত IPS অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কারণ তার মনে হয়েছিল, যদি নিজে কোনওভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তাহলে তাদের সম্পর্কও একদিন না একদিন দুই বাড়ির তরফ থেকেই মেনে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে সম্প্রতি সুতপাকে পাঠানো একটি ভিডিওও সামনে এসেছে। যেখানে সুশান্তকে বলতে দেখা গিয়েছে, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখি।’ জানা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও পোস্ট করে সুতপাকেই এই বার্তা পাঠান সুশান্ত। ওই ভিডিওতে তাকে কাঁদতেও দেখা গিয়েছে। তবে পোস্টটি দেখেও সুতপাকে তার কোনও জবাব দিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে সুতপার পরিবারের দাবি, বহুদিন ধরেই সুশান্ত নানাভাবে মৃত ওই কলেজ ছাত্রীকে বিরক্ত করত। সুশান্তর সমস্ত নম্বর ব্লক করা ছিল সুতপার। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন নম্বর থেকে সুশান্ত সুতপাকে ফোন করত। বাধ্য হয়েই একাধিকবার মৃত ওই তরুণীকে নিজের ফোন নাম্বার পাল্টাতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেই নম্বরও কোনও না কোনওভাবে জোগাড় করে সেখানেও ফোন করা শুরু করে সুশান্ত।
অন্যদিকে গতকাল অর্থাৎ শনিবারই সুশান্তর পিসি দাবি করেছেন, সুশান্ত সুতপার পিছনে নয় বরং সুতপাই সুশান্তর পিছনে পড়ে ছিল। সুশান্ত নাকি বহুদিন আগেই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিল, কিন্তু সুতপাই তাকে বারবার ফোন করে ডাকত। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সুতপা এবং সুশান্তের সম্পর্কের তিক্ততা এতটাই বেড়ে যায় যে ক্লাবের ছেলেদেরকে ডেকে সুতপা সুশান্তকে একবার মারও খাইয়েছিল। সেই সমস্ত জমে থাকা রাগের বহিঃপ্রকাশই এই খুন কিনা সেটাই এই মুহূর্তে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা।
তবে সুশান্তর বাড়ির লোকের তরফ থেকে যাই বলা হোক না কেন সুতপাকে নিয়ে করা সুশান্ত শেষ ভিডিও কিন্তু বলছে সম্পূর্ণ অন্য কথা। ওই ভিডিওতে সুশান্তকে বলতে শোনা গেছে, ‘পাঁচ মাস হয়ে গেল ভালো করে কথা বলিস না। পাঁচ মাসে একটা দিনও ভালো কাটেনি আমার। আমি মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে অভিনয় করে কাঁদতে পারি না। তুই বললে বিষ অবধি খেয়ে নিতাম কিন্তু এখন আমি কিভাবে থাকব।’ তবে ঠিক কি কারণে সুতপা এবং সুশান্তের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরেছিল এবং সুতপা সম্পূর্ণভাবে নিজেকে এই সম্পর্ক থেকে বার করে এনেছিলেন তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সম্পর্কে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কারণেই তাদের এই দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কে চিড় ধরে ও তারই পরিনাম এই হত্যাকাণ্ড।