কলকাতা: রাজ্য সরকার অনেক তথ্যই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মার্ক্সবাদী পথ পত্রিকার সম্পাদক। তিনি সম্পাদকীয়তে লিখেছেন – “এক তথ্যশূন্যতার মধ্যে রাজ্য। এই সংকট শুধু রাজ্যের নয়। দেশ-দুনিয়াতেও। তারমধ্যেই চলছে ভুলভাল তথ্য দেওয়ার প্রতিযোগিতা। বিকৃত তথ্যের পরিবেশন। কিংবা তথ্যকোষকে হাপিস করে দেবার প্রবণতা। এমন নয় যে কোনও বিকল্প তথ্য নেই। বিকল্প তথ্য আছে। তার অনুসন্ধান প্রয়োজন।”
সূর্য মিশ্র লিখেছেন, “বাজেটের সময় যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করার রীতি, রাজ্য সরকার তা পেশ করছে না। পাওয়া যাচ্ছে না অনলাইনেও। বিশেষ করে গত তিনবছর ধরে। রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট, এসডিপি) সর্বশেষ তথ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থার (সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন, সিএসও) কোনও মিল নেই। দিনের আলোর মতো স্পষ্ট রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনেকটাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো। রাজ্য সরকারের দাবিগুলি আসলেই পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বস্তুত, রাজ্যে কর্মসংস্থান, শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা, অথবা খাদ্য, নিরাপদ পানীয় জল থেকে বিদ্যুৎ, কিংবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিষেবা ক্ষেত্রের হালহকিকত— এককথায় অর্থনৈতিক অবস্থা কী, তা বোঝার কোনও উপায় নেই।”
তাঁর আরও বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে বিকল্পের অনুসন্ধান খানিক কষ্টসাধ্যও বটে। তবে এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখানে যা আলোচনা করেছেন, তা থেকে পাওয়া যাবে বেশকিছু জরুরি তথ্য। একটি বাম ও গণতান্ত্রিক বিকল্পের সন্ধানে যা যথেষ্ট সাহায্য করবে। যেমন প্রভাত পট্টনায়েক লিখেছেন অধ্যাপক অমিয় বাগচী, মালিনী ভট্টাচার্য, মিহির ভট্টাচার্য, রতন খাসনবীশ, গৌতম গুপ্ত ও পার্থিব বসুর সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁদের সাহায্য নিয়ে। সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে গ্রামের কৃষি ক্ষেত্রের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন রতন খাসনবিশ। খুবই শ্রমসাধ্য ও কঠিন কাজ। কয়েকটি নির্দিষ্ট বিকল্পের কথাও বলেছেন তিনি। মেয়েদের নিয়ে বিকল্প লিখতে গিয়ে মালিনী ভট্টাচার্য অনেক আনুষঙ্গিক প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। যা আমাদের চিন্তার খোরাক জোগাতে পারে। বাকি সবাই রাজনৈতিক ও গণআন্দোলনের নেতৃত্ব। তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সকলের প্রতি রইল অশেষ ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা।”
পরিশেষে সূর্যকান্ত বলেছেন, “মার্কসবাদী পথ আমাদের তাত্ত্বিক মুখপত্র। কোনওরকম আড়ষ্টতা না রেখে খোলামনে নিজেদের মতামত লেখার জন্য আমরা তাঁদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। এবং কোনওরকম সম্পাদনা ছাড়াই তা প্রকাশ করা হলো।” সিপিএমের রাজ্য সম্পদকের মতে, এটা কেবল একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের জন্য নয়। নিত্যদিনের জীবনজীবিকায় আক্রমণ মোকাবিলার লড়াইয়ে, সংগ্রামের ময়দানে প্রয়োগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষালব্ধ অভিজ্ঞতা, পর্যালোচনা থেকে নতুন নতুন বিকল্পের অনুসন্ধানে নিরন্তর প্রক্রিয়া যাতে অব্যাহত থাকে-তার জন্য অত্যন্ত জরুরি।