মানুষের শরীরে ‘লেজ’, জটিল অস্ত্রোপচারে অসাধ্য সাধন নীলরতন হাসপাতালে

মানুষের শরীরে ‘লেজ’, জটিল অস্ত্রোপচারে অসাধ্য সাধন নীলরতন হাসপাতালে

কলকাতা: সেই কোন কালে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই অঙ্গ। এত লক্ষ বছর পর ফের দেখা দিল মানুষের শরীরে। ‘লেজ’। প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর আগে, মানুষ তখনও মানুষ হয়নি। শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষ হওয়ার পথে সেই প্রাণীর শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে ছিল একটি লেজ। কোনও কাজে না লাগায় দীর্ঘদিনের বিবর্তনের পর ছোট হতে হতে এক সময় হারিয়ে যায় সেই অঙ্গ। শেষ পর্যন্ত শিরদাঁড়ার একদম গোড়ায় ‘ককফিক্স’ নামক ছোট্ট হাড় হয়েই থেকে যায় সেই অঙ্গ। সেই লেজই এবার দেখা দিল একবিংশ শতকের মানুষের দেহে।

বাঁকুড়ার কাঠজুড়িডাঙার মলিনা কর্মকার। সাধারণ ছাপোষা পরিবারের বউ। বছর একান্নর সেই মহিলার শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তের ছোট হাড়টি অস্বাভাবিক রকমের বড় হয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। চিত হয়ে শুতে গেলে যন্ত্রণা। মানুষের শরীরে লেজ? চিন্তায় পড়ে যায় পরিবার। সেই লেজের চিকিৎসা করার জন্য প্রথমে মলিনাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে। কিন্তু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতাল থেকে জানানো হয় যে, লেজটি আসলে একটি টিউমার। যদিও টিউমার সচরাচর এমন জায়গায় দেখা যায় না। তাকে কলকাতার বড় হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলা হয়।

কলকাতায় এসে মলিনাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় নীলরতন সরকার হাসপাতালে। গত ২৬ জানুয়ারি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে জানা যায়, টিউমারটি আসলে একটি প্রথম পর্যায়ের কার্সিনোমা। ওর মধ্যে ক্যানসারের কোষ রয়েছে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, “রোগীর প্রথমে ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং টেস্ট করা হয়। তারপর কম্পিউটেড টোমোগ্রাফিও করা হয়। জানা যায় ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা টিউমারটি শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তের ঠিক উপরে ‘ককফিক্স’-এর সঙ্গে এমনভাবে লেগে রয়েছে তাকে বাদ দেওয়া খুব কঠিন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ তিন ঘন্টার অস্ত্রোপচারের পর গোটা ককফিক্সটাই কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচারের পর আপাতত ভালো রয়েছেন মলিনাদেবী। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গ ককফিক্স বহু লক্ষ বছর আগে লেজ হিসেবে ছিল মানুষের দেহে। তবে এখন আর কোনও কাজে আসে না বলে তাকে সহজেই কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। তবে তাতে কিছুটা মাংস কেটে বাদ যায়। মলিনাদেবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিতম্ব থেকে কিছু মাংস কেটে সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এতে রোগীর ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *