করোনার কোপে মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে, মমতার দরবারে আর্জি সুজনের

করোনার কোপে মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে, মমতার দরবারে আর্জি সুজনের

কলকাতা:  করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার নবান্নে সর্বদল বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই যুদ্ধে রাজ্য সরকারের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েই বেশ কিছু বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷

এদিন বৈঠকে সুজনবাবু বলেন, আমাদের রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিট নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ অবিলম্বে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজির অনুমোদিত কিট ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া উচিত রাজ্যকে৷ প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এই বিষয়ে মনস্থির করতে পারেনি৷ এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিত৷ এই সময় দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য৷

পাশাপাশি কলকাতা ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা ও আইসোলেশন চালু করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সুজনবাবু৷ তিনি বলেন, এই যুদ্ধের সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য খুব স্বাভাবিকভাবেই মাস্ক অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ তাঁরা সুরক্ষিত না থাকলে এই লড়াইটাই দুর্বল হয়ে পড়বে৷ তাঁদের জন্য মাস্কের বন্দোবস্ত সেই ভাবেই করতে হবে৷ তবে মাস্কের যোগান যদিও সামাল দেওয়া যাচ্ছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কিন্তু অনেকটাই আকাল রয়েছে৷ হ্যান্ড স্যানেটাইজার নিয়ে কালোবাজারিও হচ্ছে৷ হ্যান্ডস্যানিটাইজার সহজেই তৈরি করা যায়৷ অনেক সংস্থাই এটি তৈরি করে৷ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল আমাদের রাজ্যে পর্যাপ্ত রাখাটা জরুরি৷

এদিন সুজনবাবু রাজ্য সরকারকে জানান, ওষুধ সরবারহের মূল কেন্দ্র মেহতা বিল্ডিং এদিন সকাল থেকেই লকডআপ আছে বলে মনে হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে দু’তিনের মধ্যেই ওষুধেরও সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই সমস্যা যাতে তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি নাম না করেই করোনা প্রতিরোধে বিজেপি নেতাদের গোমূত্র পানের বিরুদ্ধে সুর চড়ান সুজনবাবু৷ তিনি বলেন, এটি চূড়ান্ত অপবিজ্ঞান৷ করোনা মোকাবিলায় গোমূত্র পান করছে মানুষ এটা ভাবা যায় না৷ বাংলায়এটা চলতে পারে না৷ গতকাল জনতা কার্ফু চলার মাঝেই বিকেল পাঁচটায় যেভাবে খোল-কর্তাল হাতে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছিল তা দেখে তিনি হতবাক৷ সুজনবাবু বলেন, মানুষের কাছে করোনাবাইরাস সংক্রান্ত বার্তাটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে পৌঁছে দেওয়া উচিত৷ এই দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই৷

তাঁর পরামর্শ, এ রাজ্যে যাঁরা গরিব মানুষ আছেন, তাঁদের জন্য একমাসের রেশন সহ অন্যান্য খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক৷ করোনা ঠেকাতে গিয়ে কাউকে যেন খিদের জ্বালায় মরতে না হয়৷ সরকারের কাছে আবেদন, খেত মজুর, শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট প্যাকেজ করা বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা হোক৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে একটাই বক্তব্য,  জনধন প্রকল্প যখন হয়েই গিয়েছে, তখন জরুরি ভিত্তিতে সেখানে পাঁচ হাজার টাকা করে পৌঁছে দিন৷ এটা খুব কঠিন কাজ হওয়ার কথা নয়৷ পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফ যদি ২ হাজার টাকা করে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন৷ পরিযায়ী শ্রমিক বা ভিন রাজ্যের আটকে শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট হেল্পলাইন চালু করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি৷

সুজনবাবু বলেন, ব্লক ও মিউনিসিপ্যালিটি স্তরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ সবাইকে নিয়ে এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে৷ ১০২ ডায়াল করলে যে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া যায়, তা অনেক সময়ই মিলছে না৷ সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই সাড়া দেন না৷ সবাই যাতে পরিষেবা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 10 =