বুলবুল, ফণীর অভিজ্ঞতা হাতিয়ার, ঘাটতি পরিকাঠামোয়! আমফান মোকাবিলার সাফল্যে সন্দিহান পুর নিগম!

বুলবুল, ফণীর অভিজ্ঞতা হাতিয়ার, ঘাটতি পরিকাঠামোয়! আমফান মোকাবিলার সাফল্যে সন্দিহান পুর নিগম!

কলকাতা: পাঁচিলের মতো ঢাল হয়ে থাকা সুন্দরবন বার বার সামুদ্রিক ঘূর্ণীঝড়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে। পুরো আটকাতে না পারলেও ঠেকিয়ে দিয়েছে জলোচ্ছ্বাস আর গতি কমিয়ে দিয়েছে ঘূর্ণীঝড়ের। আর তা ঠেকাতে গিয়েছে হাজারে হাজারে ম্যানগ্রোভ গাছ শহিদ হয়েছে। তবুও এক দুই বার সেও বিফল হয়েছে প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে। আয়লাকে সে ঠাকাতে পারেনি। আর ফণী কলকাতাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল ওড়িশা দিয়ে ঢুকে পড়ে। এই দুই ঝড়ের অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে আম্ফানের মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে শহর কলকাতা।

 পুর নিগমেরর প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন। বিপজ্জনক বাড়ি ও নিচু এলাকাগুলিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের তাদের নিরাপত্তার জন্য নিকটবর্তী কমিউনিটি হলে সরে যেতে বলা হয়েছে। পুর নিগমেরর কন্ট্রোল রুম ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে, দুর্যোগ পুরোপুরি না কাটা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। দ্রুত জল অপসারণের জন্য সবকটি  ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন মিলিয়ে ৩৭৯ টি পাম্প প্রস্তুত আছে। এছাড়া অতিরিক্ত  জলজমে এমন এলাকায় অতিরিক্ত পাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনেক  গাছ পড়বে ধরে নিয়ে গাছ কাটার জন্য দল প্রস্তুত করা হয়েছে, ঝড়ে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়লে, তা ভাঙার জন্য পুর নিগমেরর ডেমলিশন টিমকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসকমন্ডলীর এক একজন সদস্য এক একটি বোরোর উপর নজর রাখবেন বলে ফিরহাদ হাকিম জানান। এছাড়া প্রতিটি বোরো কোঅর্ডিনেটার ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে । শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিজ্ঞাপণের বোর্ড খুলে ফেলা হচ্ছে ।এদিন বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুর নিগমেরর প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের কথা হয়েছে। পুর নিগমের আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে ফিরহাদ হাকিম জানান।।। শহরের অভিভাবক কলকাতা পুরনিগমের কাছে আছে গাছ কাটার জন্য ১৬টি বড় ল্যাডার ও ১৮টি ছোট ল্যাডার। আয়লার সময় শহরে ছোট বড় মিলিয়ে গাছ পড়েছিল ৭৮টি। ফণীর সময় উত্তর কলকাতায় ৬টি ও দক্ষিণ কলকাতায় ১১টির মতো গাছ পড়েছিল। বেশি গাছ পড়েছিল রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন এলাকায়। সেই হিসাব মাথায় রেখেই এগোচ্ছে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ।নজর রাখা হচ্ছে পাম্পিং স্টেশনগুলির দিকেও।

কারণ মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে শহরে। সেই জল যাতে দ্রুত বেড়িয়ে যায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে। শহরে পাম্পিং স্টেশন রয়েছে ৭৩ খানি। প্রতিটি পাম্পিং স্টেশনে গড়ে পাম্প আছে ৩টি করে। এর বাইরে শহরে বড় মাপের পাম্পিং স্টেশন আছে ৫টি। মানিকতলা, ধাপা, পালমের ব্রিজ, বালিগঞ্জ ও কুঁদঘাট। উত্তর কলকাতায় ১৪টি পাম্পিং স্টেশনের মধ্যে ৫২টি পাম্প আছে। এরমধ্যে ৩০টি ঠিক আছে, বাকিগুলির অবস্থা ভালো নয়, মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্ত, লকডাউনের জন্য মিস্ত্রি পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে কতটা কাজ হবে তা নিয়েও সংশয় আছে। বড় ৫টি পাম্পিং স্টেশনের প্রতিটা ২ ঘন্টায় ৫৪ কিউসেক জল বার করার ক্ষমতা রাখে। বাকিগুলির ক্ষমতা ২ ঘন্টায় ৫ থেকে ৮ কিউসেক জল বার করার।নজরে থাকছে বস্তি ও খালপাড়ের বাড়িগুলির দিকেও। আয়লার সময় ভেঙে ছিল বেলেঘাটা খালপাড়, টালা বস্তি, বেলগাছিয়ার রসগোল্লা বস্তি, কালীঘাটের বস্তি এলাকায়। সবমিলিয়ে পুর নিগমেরর হিসেব মোতাবেক ৫৬টি বাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আবার ফণীর সময় উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা খালপাড় এলাকায় ৪টি বাড়ির ছাদ উড়ে গেছিল। এবার আম্ফান কী খেল দেখায় সেটা দেখা বাকি। তবে যে গতিতে শহরে আয়লা এসেছিল তার থেকে আরও কিছুট বেশি গতিতেই ধেয়ে আসবে আম্ফান। তাই সতর্কতা থেকে প্রস্তুতি কোথাও ফাঁক রাখতে চায় না কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *