চোখের জলে দেবীর বিদায়, আবার এসো মা… প্রার্থনা গিরিরাজ-মেনকার

চোখের জলে দেবীর বিদায়, আবার এসো মা… প্রার্থনা গিরিরাজ-মেনকার

কলকাতা: রাজবাড়ির ৬০০ বছরের পুরানো দেবীদুর্গার নবমীর সন্ধ্যারতি করছেন পুরোহিতমশাই, আর ঠাকুরদালানের এক কোণে ঝাপসা চোখে চেয়ে তা দেখছেন রাজেশ্বরীদেবী। রায়চৌধুরী পরিবারের বর্তমান রাণীমা। চোখের পাতাগুলো আজ যেন বড়ই ঝাপসা, অবাধ্য ধারা নেমে আসছে কোণ বেয়ে। দুপুরে হোম, যজ্ঞের পর থেকে অশতীপর রাজেশ্বরীদেবী কেমন যেন নির্বাক, নিস্তব্ধ। কেননা, আজ মেয়ে চলে যাবে, কান্না আর চেপে রাখতে পারছেন না মর্ত্যের গিরিরাজ-ঘরণী।

মন খারাপ গিরিরাজ ঘরণী মেনকার।  শুক্লা দশমীতে প্রার্থনা করছেন, ‘আবার এসো মা!’ সারাবাড়ি ঝলমল করছে আলোয়, তবে তারমাঝেও গিরিরাজ পরিবারে যেন অন্ধকার। একান্তকে শূন্য চোখে সপরিবার মেয়ের পানে চেয়ে আছেন গিরিরাজ-মেনকা। আজ চলে যাবে উমা। কী নিষ্ঠুর সময়, মহাকাল। কেন দীর্ঘায়িত হয় না নবমীর নিশি। কেন তাড়াতাড়ি বয়ে গেল সব৷ চারদিন গোটা বাড়ি যেন কন্যা বরণের আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিল, সেসব শূন্য করে দিয়ে আবার কৈলাশ পাড়ি দেবে উমা। আবার একবছর খাঁ খাঁ করবে গিরিরাজের আলয়। এই চারটেদিন চার সন্তানকে নিয়ে গোটা বাড়ি যেন গমগম করছিল৷ সেসব শূন্য হয়ে যাবে। সকাল থেকেই চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না৷ অশ্রু ভরা জলে কনকাঞ্জলি দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা মেনকা৷ গিরিরাজ প্রাসাদ পিছনে ফেলে উমা পাড়ি দিল কৈলাশ। সেখানে অপেক্ষা করে আছে শঙ্কর। স্বামী, সংসার নিয়ে আবারও একবছরের ব্যস্ততায় ডুবে থাকা। এই একটা বছর আবার পথ চেয়ে মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় গিরিরাজ প্রসাদ। মনে মনে গিরিরাজ-জায়া ভাবেন, মেয়ে তো নাকি আদ্যাশক্তি, সে কি পারে না নবমীর রাতকে দীর্ঘায়িত করতে, সকাল যেন আর না হয়, তেমনটা করে দিতে। না পারবে না। কারণ মহাকাল যে পরম সত্য। তাঁকে আটকানোর সাধ্য কারও নেই।

চোখের জলে মেয়ের বিদায়ের পথে, আলাদা পায়ের ছাপ কান্নাটাকে আরও উস্কে দে মেনকার। ঘরে গিয়ে মহলের এক প্রান্তে দুর্গাদালানের সামনে গিয়ে আবারও অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকেন রাজেশ্বরী দেবী। মনে মনে প্রার্থনা করেন, ভাল থাকিস মা, সাাবধানে আসিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − ten =