দেবনীল সাহা: বয়স ৯৪। কিন্তু এই বয়সেও লাল স্রোতের হাতছানি অগ্রাহ্য করতে পারেননি তিনি। ২৮ ফেব্রুয়ারি সুদূর নামখানার নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্রিগেডের সমাবেশে ছুটে এসেছেন তিনি। সাদা ধুতির সঙ্গে ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি। মাথায় ছড়ানো লাল টুপি, হাতে লাল ঝান্ডা আর মুখে রক্ত গরম করা স্লোগান ‘বাংলায় এবার দরকার, বামফ্রন্ট সরকার।’
নাম সুবল খুটিয়া, বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানার নারায়ণগঞ্জে। চা-বিস্কুট খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন সেই সকাল সাতটায়। ট্রেন ধরে পার্ক সার্কাস, সেখান থেকে হাজার হাজার লোকের সঙ্গে লাল ঝান্ডা হাতে মিছিলে পায়ে পা মিলিয়ে ব্রিগেডের দিকে এগিয়েছেন তিনি। মনে দৃঢ় বিশ্বাস, আসন্ন বিধানসভা ভোটেই শেষ হবে ‘মোদী-দিদির স্বায়ত্তশাসন’। বাংলায় সরকার গড়বে সিপিআইএম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে জোর গলায় তিনি বললেন, “এবারের ব্রিগেড ঐতিহাসিক। এত লোক নিজের ইচ্ছায় এসেছেন, এটা আগে দেখিনি। আমার তো মনে হচ্ছে দাঁড়ানোরও জায়গা পাবো না।”
নব্বইয়োর্দ্ধ নামখানা নিবাসী সুবলবাবু জানিয়েছেন, “বাংলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অত্যাচারে গ্রাম-গঞ্জ আর নগরের মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই নরেন্দ্র মোদী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনকেই ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। এবারে বামফ্রন্ট সরকারের জোট ক্ষমতায় আসবে। ভবিষ্যতে দেশকে যদি কেউ রক্ষা করতে পারে তবে এই জোটই পারবে। দিদি-মোদির দ্বারা কিস্যু হবে না।”
বয়স শতবর্ষের দোরগোড়ায় হলে কি হবে, এদিন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে রক্তের রক্তিম ঝাঁঝ বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বয়স ৯৪-এর সুবল খুটিয়া। এভাবেই ভোটের মুখে বামেদের ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশ মানলো না বয়সের কোনও বাধা। ১৮ থেকে ৮০, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাল ঝান্ডা নিয়ে ব্রিগেডমুখী হলেন সব বয়সের মানুষ। এদিনের সমাবেশে ছাত্র-যুবদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্রিগেডের প্যারেড গ্রাউন্ড রবিবার ছিল লালে-লাল। নির্বাচনের মুখে এই ব্রিগেড সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল নিজেদের শক্তি ঝালিয়ে নেওয়া। সেই লক্ষ্যে বিজেপি-তৃণমূল বিরুদ্ধ মহাজোট যে প্রভূত ভাবে সফল সেটা বলাই বাহুল্য।