কাবুলে আটকে ঘরের ছেলে, বিনিদ্র রাত কাটছে পরিবারের

কাবুলে আটকে ঘরের ছেলে, বিনিদ্র রাত কাটছে পরিবারের

 

কলকাতা: বদলে গিয়েছে দেশের ভাগ্য। আফগানিস্তানের দখল ছিনিয়ে নিয়েছে তালিবান। আর তারপর থেকেই দেশ জুড়ে যুদ্ধের আবহ। কাবুল দখলের পর থেকেই নিজেদের ভাষায় ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে শুরু করে দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী।

চারদিকে গুলির শব্দ, বারুদের গন্ধে দমবন্ধ পরিস্থিতি। তালিবানি শাসন থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়েছেন অনেকেই, কিন্তু এখনও সেদেশে আটকে সিংহভাগ নাগরিক। আফগানদের পাশাপাশি সেখানে আটকে রয়েছেন এইরাজ্যেরও কয়েকজন। আর তাঁদের কথা ভেবেই আতঙ্কে শিউড়ে উঠছেন সুপ্রিয় মিত্র ও সানু গনসালভেস।  ভয়াবহ তালিবান রাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে গত মাসেই দেশে ফিরেছেন সুপ্রিয় মিত্র।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কাবুল এয়্যারবেসে ইউ এস এ্যাম্বাসির রান্নার শেফ হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সুপ্রিয় মিত্র । একই কাজের জন্য সানু গনসালভেস সেখানে যান ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে৷ দুজনেই রানাঘাটের বেগোপারার বাসিন্দা। কাজের শুরুর দিকে সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু চোখের সামনেই ক্রমশ পাল্টে যায় কর্মক্ষেত্রের চেহারা। শান্ত কাবুলকে ধীরে ধীরে অশান্ত হতে দেখেছেন তারা। প্রত্যক্ষ করেছেন ধ্বংসের ছবি।  আতঙ্ক আর চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দুজনেই দেশে ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও অশান্ত কাবুলে  আটকে রয়েছে তাঁদের অনেক সহকর্মী। তাঁদের জন্য দুশ্চিন্তা এখনও কাটেনি।

একইভাবে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে অশোকনগর থানার এজি কলোনির দেবনাথ পরিবার। একমাত্র ছেলে আটকে রয়েছে কাবুলে, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পরিবার। অশান্ত কাবুলের ছবি দেখে বাধ মানছে না মায়ের চোখের জল, সন্তানকে নিয়ে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না স্ত্রী। ভালো রোজগারের আশায় ২০১৮ সালে পরিবারকে রেখেই কাবুলে কাজে যোগ দিতে যান সুজয় দেবনাথ। কিন্তু এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সেদেশে আটকে পড়েছে ছেলে। তাই দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে সর্বক্ষণ। অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। সুজয় দেবনাথের বাড়ি পৌঁছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে হাবরা এবং অশোকনগর থানার পুলিশ৷

কাবুলের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলেছে জলপাইগুড়ি জেলার ওদলাবাড়ি  বাসিন্দার  আমানুল্লা খানকেও। আমানুল্লা খানের দিদি আইসা খান বিবাহ সূত্রে আফগানিস্তানে থাকেন। পেশায় চিকিৎসক, তার স্বামীও হাসপাতালের কমপাউন্ডার। কিন্তু, বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে তাঁদের। দোকান-পাঠ বন্ধ, বাড়িতে খাবার নেই। বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে গত ৩ দিন ধরে ফোনে যোগাযোগও বন্ধ, তাই দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। দিদির পরিবারকে যেকোনওভাবে  ভারতে নিয়ে আসা হোক, সরকারের কাছে এই আর্জি জানিয়েছেন আমানুল্লা খান। কাজের সূত্রে আফগানিস্তানে গিয়ে বাংলার প্রায় ২০০ জন সেখানে আটকে পড়েছে বলে খবর। তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকার সমন্বয় রেখে চলছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবিষয়ে মুখ্যসচিব, বিদেশমন্ত্রককে চিঠি লিখবেন বলেও জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 4 =