strong message
নিজস্ব প্রতিনিধি: আপাতদৃষ্টিতে দলের একটি কর্মসূচি। সেই উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ভিড় করেছিলেন। কিন্তু সেই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তাতে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। যথারীতি বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। তবে তাতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দলের পুরনো ও নতুন নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধের যে ‘চোরাস্রোত’ বইছে বলে শোনা যায় তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছেন তার যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের কথা উল্লেখ করে যে বার্তা দিয়েছেন সেটা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেই বলা হয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত। ঠিক কি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? মমতা বলেন, “সৌগতদা মাঝেমধ্যে বলেন আমার বয়স হয়ে গিয়েছে। কীসের বয়স? মানুষের মনের কোনও বয়স নেই। যতদিন বাঁচবেন কাজ করে যাবেন। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো বাঁচবেন। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করতে হবে।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, বেশ কয়েক মাস আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে দলের বিভিন্ন কাজে ও পদে বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়া হোক। সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মহলে বহুদিন ধরে এই চর্চা চলছে যে, পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে অভিষেকের শীতল সম্পর্ক রয়েছে। এমনও শোনা যায় গতবার ফিরহাদ কলকাতার মেয়র হোন এটা চাইছিলেন না অভিষেক। কিন্তু মমতার হস্তক্ষেপেই ফের মেয়র পদে বসেন ফিরহাদ। সেই জায়গা থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা তাঁর পুরনো কর্মীদের ত্যাগ ও লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ববি বলছিল দিদি কোমরে ব্যথা। জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? বলল, ওই যে মার খেয়েছিলাম। ববি, সুব্রত বক্সী, বালু অনেক ডান্ডা খেয়েছে। ওরা আমার অনেক লড়াইয়ের সঙ্গী।” সেই সঙ্গে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মমতার আহ্বান,”নতুনরা পুরনোদের সম্মান দেবেন। পুরনোরা নতুনদের কাছে টেনে নেবেন।”
আর মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে এটাই স্পষ্ট, পুরনোদের অসম্মান করা হবে বা গুরুত্ব দেওয়া হবে না, এটা তিনি একেবারেই চান না। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে দল তথা কর্মীদের মমতার এই বার্তার যে যথেষ্ট তাৎপর্য আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, এভাবেই মমতা কার্যত বুঝিয়ে দিলেন দমদম লোকসভা কেন্দ্রে সৌগত রায় আবার টিকিট পেতে চলেছেন। সেই সঙ্গে পুরনো নেতাদের তিনি যে সসম্মানে বিভিন্ন পদে রেখে দেবেন, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, এভাবেই ‘টিম অভিষেক’কে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে কি গোটা পরিস্থিতি আঁচ করেই বেশ কিছুদিন ধরে অভিষেককে সেভাবে সামনে দেখা যাচ্ছে না? যদিও অভিষেকের চোখের সমস্যা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। সেই কারণেই তিনি নেতাজি ইন্ডোরের সভায় যেতে পারেননি বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে দলের মধ্যে ‘সমান্তরাল লিডারশিপ’ চালু করতে চাইছেন অভিষেক। প্রকাশ্যে না বললেও তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় তাতে দলের পুরনো নেতাকর্মীরা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তাঁরা অভিষেক নয়, মমতার নেতৃত্বেই দলের কাজ করতে আগ্রহী। তবে কি সব কিছু অনুধাবন করেই মমতা সুচিন্তিত ভাবে এমন বার্তা দিয়েছেন? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।