কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কত? কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পৃথক পৃথক তথ্যে বাড়ছে বিভ্রান্তি! রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি রিপোর্ট সংশোধন করে ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রান্ত সংশোধনী তুলে ধরেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা৷ করোনা আক্রান্ত মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যাও তিনি জানিয়েছেন৷ কিন্তু, কেন্দ্র স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েব সাইটে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা৷
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা৷ সেই কমিটির সাংবাদিক বৈঠকের ৪৫ মিনিট পর নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যসচিব করোনা সংক্রান্ত বেশ কিছু সংশোধনী পেশ করেন৷ সাফ জানিয়ে দেন, রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ৩৪ জন, মৃত্যু হয়েছে তিন জনের৷ করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে পৃথক পৃথক দুটি সাংবাদিক বৈঠক করা হলেও ২ এপ্রিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে কোনও মেডিক্যাল বুলেটিন ওয়াবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি৷ ফলে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে করোনা সংক্রান্ত কোনও লিখিত রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ না হওয়ায় ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে৷
কিন্তু নবান্ন থেকে দেওয়া মুখ্যসচিবের তথ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য পৃথক৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে (প্রতিবেদন লেখা হয়েছে ১০টা ৫১ মিনিট, সেই অনুযায়ী প্রকাশিত তথ্য) গোটা দেশজুড়ে ২০৮৮ জনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৫৬ জন সুস্থ হয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ রাজ্যভিত্তিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে৷ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নাম তালিকার শেষ অর্থাৎ ২৯ নম্বরে রয়েছে৷ সেখানে সাব উল্লেখ করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা ৫৩ জন৷ মৃতের সংখ্যা ৩ জন৷ সুস্থ হয়েছেন তিন জন৷
কিন্তু বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব নবান্ন থেকে করোনা সংক্রান্ত সংশোধিত রিপোর্ট প্রকাশ করে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আজকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, ‘‘রাজ্যে মোট করোনা পজেটিভ হয়েছেন ৫৩ জন৷ আমি আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করছি এই যে, ৫৩ জনের মধ্যে তিনজন তাঁরা নেগেটিভ টেস্ট করে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন৷ আপনারা জানেন৷ তাহলে পজেটিভ কেসের সংখ্যা দাঁড়াল ৫০৷ এই ৫০ জনের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে আজ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ন’জনের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়েছেন৷ দ্বিতীয় টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে তাদের৷ ওই সংখ্যা বাদ দিলে মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪১৷ এর মধ্যে আমাদের আপনারা জানেন কিছু লোক ছিল যারা, বিভিন্ন হাসপাতালে ভিন্ন রোগে ভুগছিলেন৷ কিডনির অসুখ ছিল৷ এই ধরনের কতগুলি লোক যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁরা মারা গিয়েছেন৷ আর তিন জন করোনা সংক্রান্ত মৃত্যু হয়েছে৷ তাহলে সংখ্যা মোট হচ্ছে ফরটি ৪১-৩ যাঁদের মৃত্যু হয়েছে৷ যাঁদের করোনায় মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মৃত্যু করোনার জন্য হয়েছে, সেটা এখনো প্রমাণিত নয়৷ আমরা যেটা দেখেছি, অন্য কোনও অসুখ ছিল৷ এই জন্য মারা গিয়েছেন৷ কিন্তু এদের নাম তালিকাতে আছে৷ কাজেই এখন আমাদের রাজ্যে করো না পজেটিভ সংখ্যা হচ্ছে ৩৪৷ আমি আপনাকে এই কথা বলছি ২ এপ্রিল সন্ধে ছটায়৷ এটাই আমার বক্তব্য৷’’
মৃত্যুর সংখ্যা প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব আরও বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য মৃত্যু হয়েছে তিন জনের৷ করোনা সংক্রান্ত আর যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দেখানো হয়েছে৷ এটা করোনায় মৃত্যু, সেটা এখনও প্রমাণিত নয়৷ এদের অন্যান্য রোগ ছিল৷ অন্য রোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে ওই চারজনের৷ কিন্তু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তা প্রমাণিত হয়নি৷ ওরা চারজন আক্রান্ত ছিলেন তা প্রমাণিত হয়নি৷ ওরা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ওখানে চিকিৎসা চলছিল৷ চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে৷ আপনারা জানেন, এর মধ্যে দু'জনের মৃত্যুর পর পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে৷ এই চারটে কেস করোনা রিলেটেড নয়৷ এখন সারা পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে, বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরনের রোগী থাকলে থাকতে পারে৷ যাদের মৃত্যু অন্য কারণে হয়েছে৷ এটাকে চট করে ধরে নেওয়া উচিত হবে না৷ এটা আতঙ্ক সৃষ্টি করবে৷ এই জন্য আমি আপনাদের কাছে এসে এই কথা বললাম৷ আমি আবারও বলছি, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৷ পশ্চিমবঙ্গের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে, তিনজনের৷ এইটাই আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করলাম৷’’
নাবান্নে সাড়ে চারটে নাগাদ রাজ্য সরকারের গঠিত চিকিৎসকদের বিশেষজ্ঞ কমিটি সদস্যরা সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ‘‘যাঁদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, করোনা পরীক্ষা করার জন্য, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জন৷ মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬৩। যে রিপোর্ট ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার গ্রহণ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩ জন৷ মোট সংখ্যা ৭৩৮৷ গত ২৪ ঘণ্টায় যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন৷ এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৫৩ জন৷ করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন জন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৪ জন৷ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এখনো পর্যন্ত৷ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশন রয়েছেন ১৩৭ জন৷’’