কলকাতা: তৃণমূল ছাত্র পরিষেদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিট (এনইইটি) এবং জি (জেইই) নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন তিনি বলেন, জেইই এবং নিট পরীক্ষা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা৷ চিন্তার মধ্যে রয়েছেন অভিভাবকরাও৷ ‘সবাই ভাবছে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অসুস্থ হব না তো?’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিন্তায় চিন্তায় মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে৷ পরীক্ষা হলে কী ভাবে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে? গায়ের জোড়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ যার ফলে ছাত্রছাত্রীদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে৷ স্কুলগুলি আমাদের হাতে রয়েছে৷ কিন্তু স্কুলগুলিতেও মাধে মাঝে দিল্লি থেকে ফরমান দেওয়া হয়৷ তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলের পরীক্ষা আমরা নেব না৷ অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ শুধুমাত্র মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে৷
আরও পড়ুন- শিক্ষক দিবসে উঠবে শিক্ষক বদলির দাবি, ময়দানে নামছে সংগঠন
তিনি আরও বলেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জেইই ও নিট পরীক্ষা পিছনোর জন্য পরশু দিন সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মিলে আলোচনায় বসেছিলাম৷ ওই বৈঠকে অন্যান্য রাজ্যের নেতৃবৃন্দরাও ছিলেন৷ সবাই মিলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের হয়ে জেইই ও নিট পরীক্ষা স্থগিতের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব আমরা৷ নিট এবং জেইই স্থগিত করতে আজ ছয়টি রাজ্য ও এই ছয় রাজ্যের মন্ত্রীরা রিভিউ পিটিশনে সাক্ষর করেছেন৷ আমাদের রাজ্য থেকে সাক্ষার করেছেন মলয় ঘটক৷ এখন কোনও ভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে আমরা মামলা করছি৷ প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আজ আরও একটি রায় ঘোষণা করেছে৷ ওই রায়ে বলা হয়েছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে৷ পরীক্ষা ছাড়া ফলাফল ঘোষণা করা যাবে না৷
এদিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন বা ইউজিসি-র বিরুদ্ধেও একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ছেলেমেয়েদের কেন এ ভাবে বিপদে ফেলছেন? আপনারা এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ এখন বলছেন পরীক্ষা নিতে হবে৷ তখন নিরাপত্তার কথা বলা হল, এখন তাহলে কী হল৷’’
প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়ে ইউজিসি প্রথমে জানিয়েছিল পরীক্ষার প্রয়োজন নেই৷ এর পর ১১ জুলাই আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়৷ সেখানে বলা হয়, পরীক্ষা না দিলে সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক রাজ্য ইউজিসি’র প্রথম গাইড লাইন মেনে রেজাল্টও দিয়ে দিয়েছে৷ আর কেন্দ্র এখন সুপ্রিম কোর্ট দেখাচ্ছে৷ আসলে এখানে ভোট রাজনীতি করা হচ্ছে৷
আরও পড়ুন- কাজ মেলেনি বাংলায়, মালিকের পাঠানো বাসে তামিলনাড়ুর পথে উত্তরের শ্রমিকরা
তাঁর যুক্তি, আইআইটি-র মতো দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পরীক্ষা বাতিল করেছে৷ অথচ নিট ও জেইই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র৷ আমেরিকায় স্কুল খুলেছিল৷ ক্লাস করতে গিয়ে ১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হতে হয়েছিল৷ এখনও দেশে লকডাউন চলছে৷ এখনও পুরোপুরি বিমান, রেল চলছে না৷ চলছে না সব রকমের যানবাহন৷ এই অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে৷ ছেলেমেয়েরা যদি ঠিক মতো পরীক্ষা কেন্দ্রেই পৌঁছতে না পারে, তাহলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাঁদের বছর নষ্ট হলে দায়ী থাকবে কে?