মোদীর আগেই কৃষিতে বেসরকারি বাজারের ‘অনুমতি’ দিয়েছে মমতা সরকার!

মোদীর আগেই কৃষিতে বেসরকারি বাজারের ‘অনুমতি’ দিয়েছে মমতা সরকার!

 

কলকাতা: কেন্দ্রের কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে তুলকালাম সংসদ৷ প্রতিবাদে সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা৷ বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনটি কৃষি বিলই পাশ হয়ে গিয়েছে সংসদে৷ কৃষিক্ষেত্রের সামনে বৃহৎ বাণিজ্যের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে! কিন্তু কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের অনেক দিন আগেই এই পথে হেঁটে ওয়েস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেটিং (রেগুলেশন) ১৯৭২ সালের আইনকে শিথিল করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, অভিযোগ বিরোধীদের৷ কৃষি ক্ষেত্রকে খুলে দেওয়া হয়েছে কর্পোরেট দুনিয়ার সামনে! ইলেকট্রিক ট্রেন্ডিং লাইসেন্স দিয়ে মোদীর আইনকে লাগু করার পথ প্রশস্ত করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বামেদের৷

আরও পড়ুন- পিএম কিষাণে কেন বঞ্চিত বাংলা? রাজ্যকে তুলোধনা ধনখড়ের, রা কাড়লেন না আলু-পিঁয়াজ নিয়ে

 

তাদের দাবি, গত ১৮ মার্চ রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর থেকে জারি করা এক নির্দেশিকা লক্ষ্য করলে মিলবে কেন্দ্রীয় কৃষি বিলের ছাপ৷ যেখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত কৃষি বাজারকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে৷ রাজ্যের আইনকে সংশোধন করে সরকারের মার্কেটিং কমিটি বা বোর্ড এলাকার ভিতরে ও বাইরে ব্যক্তি মালিকানায় কৃষি বাজার খোলার ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের এই আইনের ফলে নামমাত্র লাইসেন্স ফি দিয়েই কৃষি বাজার খুলতে পারবে বেসরকারি সংস্থাগুলি৷ একটি এলাকার জন্য ৫ হাজার টাকা এবং একাধিক এলাকায় ইলেকট্রিক ট্রেন্ডিংয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা এককালীন লাইসেন্স ফি ধার্য করেছে নবান্ন৷ যার অর্থ কেন্দ্রের কৃষি বিল পাশের আগেই এ রাজ্যে কর্পোরেট সংস্থার সামনে খুলে দেওয়া হয়েছে কৃষি বাজার৷ অথচ দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রের কৃষি বিলের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছেন তৃণমূল সাংসদরা, অভিযোগ বামেদের৷

 

বামেদের অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে করোনা সংক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়ার আগে গত ১১ মার্চ ‘কৃষকদরদি’র মুখোশ পড়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ওই বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘আমরা সবসময়ই কৃষকদের বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকি৷ তাই এবার থেকে ২২টি রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির অধীন ১০৯টি চেকপোস্ট ১ এপ্রিল থেকে তুলে দেওয়া হবে৷’’ এই ঘোষণার ঠিক সাত দিনের মাথায়, অর্থাৎ ১৮ মার্চ রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর থেকে জারি করা একটি নির্দেশিকায় রাজ্য নিয়ন্ত্রিত কৃষি বাজারকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়৷ কৃষিক্ষেত্রে খুলে দেওয়া হয় অবাধ বাণিজ্যের পথ৷ পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ কৃষি পণ্য বাজার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়৷ এর পর গত ৩১ মার্চ আরও একটি আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়৷ ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, ১ এপ্রিল থেকে অনলাইনে কৃষিপণ্যের মূল্যায়ন করে বাজার থেকে লেভি আদায় করা হবে৷ যদিও এখনও এই ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি সরকার৷ চেক পোস্ট থেকেই কর আদায় করা হচ্ছে৷ 

আরও পড়ুন- লজ্জা! এ কোন বাংলা? মুসলিম, তাই কি তাড়ানো হল শিক্ষকদের? সপ্তমে প্রতিবাদ

আইন সংশোধন করে কার্যত রাজ্য নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নেয় কেন্দ্র৷ রেগুলেটেড মার্কেটের পরিকাঠামো বজায় থাকলেও শিথিল করা হয় নিয়ন্ত্রণকে৷ বেসরকারি সংস্থার সামনে বৃহৎ কৃষি বাজার খোলার পথ প্রশস্ত করে দেয় রাজ্য সরকার৷ হাট, কৃষিবাজার, হিমঘর থেকে মেলা সর্বত্রই বেসরকারি সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ বামেদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার আজ যা করেছে, অনেক দিন আগেই সেই পথ খুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − two =