সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুরু হয়েছিল বামেদের রক্তক্ষরণ, বিতর্কে ভিত টলেছিল বুদ্ধদেবের

কলকাতা: ২০০১-এর বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই একটু একটু করে শক্তি বাড়াচ্ছিলেন সেই সময় বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যদিও সেবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারই ক্ষমতায়…

buddha HT

কলকাতা: ২০০১-এর বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই একটু একটু করে শক্তি বাড়াচ্ছিলেন সেই সময় বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যদিও সেবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারই ক্ষমতায় আসে।  ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ২৯৪-এর মধ্যে ২৩৫টি আসনে জেতে বামফ্রন্ট। দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সরকার গঠনের পরই রাজ্যে শিল্পের জোয়ার আনতে সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর এক লক্ষ টাকার গাড়ি কারখানা গড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। এর কিছু দিন পরই সিঙ্গুরে জমি পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় টাটার প্রতিনিধিদের। এ নিয়ে বিধানসভায় আওয়াজ তোলে  তৃণমূল৷ সেই সময় বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০! কী করবে ওরা’৷ তাঁর এই মন্তব্য বিতর্কের ঝড় তোলে। টাটা গোষ্ঠীকে সিঙ্গুরে ১২০০ একর জমি দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। কারখানা তৈরিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত  মমতা-সহ বিরোধীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে সিঙ্গুর থেকে পিছু হঠে টাটারা৷

 

রাজ্যকে শিল্পায়নের সরণিতে আনতে গিয়ে সিঙ্গুরে এবং নন্দীগ্রামে ‘জোর করে’ কৃষিজমি অধিগ্রহণের যে পন্থা বুদ্ধদেববাবু নিয়েছিলেন, তা কার্যত তাঁর বিদায়ের পথ প্রস্তুত করে দিয়েছিল৷ চরম রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। সেই সময় বাম সরকারের স্লোগান ছিল, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’।

এর পর ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ, শিরোনাম কাড়ে নন্দীগ্রাম৷ পুলিশ গুলি, সংঘর্ষে নিহত হন ১৪ জন গ্রামবাসী। যা বাম সরকারের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছিল৷  সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের বিতর্কে ভাঙতে শুরু করেছিলেন বুদ্ধবাবু। কোথাও কোথাও প্রশাসনিক রাশও আলগা হচ্ছিল। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে যেখানে বামেদের একতরফা দাপট ছিল, ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ধাক্কা খায় সেই বামফ্রন্টই। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের দখল নেয় বিরোধী তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ায় বামফ্রন্ট জিতলেও, খুব কাছেই ছিল তৃণমূল৷

 

এরপর ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে শুরু হয়ে বামেদের রক্তক্ষরণ। ৪২টি আসনের মধ্যে ২৭টিতে হেরে যায় বুদ্ধদেবের দল। ১৯টি সাংসদ পেয়ে যায় তৃণমূল। তাদের সমর্থনে একটি আসনে জেতে এসইউসি। ধীরে ধীরে সমর্থন হারাতে শুরু করেন বুদ্ধদেব৷ প্রশাসনের উপর থেকেও রাশ আলগা হয়ে যায়৷ নিচুতলার কর্মী এবং সমর্থকরা দলে দলে যোগ দিতে শুরু করে তৃণমূলে। ২০১১-র বিধানসভা ভাটে ইতি পড়ে ৩৪ বছরের বাম জমানার৷ রাজ্য রাজনীতিতে ঘটে বৃহৎ পালা বদল৷ ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার৷