সঙ্গী হবে করোনা! ধীরে ধীরে সচল হবে বাংলা, জানালেন মমতা

সঙ্গী হবে করোনা! ধীরে ধীরে সচল হবে বাংলা, জানালেন মমতা

কলকাতা: করোনা এখনই বিদায় নেবেনা তা ধরে নিয়েই রাজ্য সরকার সবরকম  সতর্কতা বজায় রেখে অর্থ নৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু করার কথা ভাবছে।মঙ্গলবার নবান্নে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করার পর  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান  , ২ মাস কাজ বন্ধ থাকায় অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এজন্য  কড়াভাবে লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জনজীবনকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করতে  আগামী ৩ মাসের জন্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করা হবে।করোনা সংক্রমণের নিরিখে চিহ্নিত জোনগুলিকে আরও ছোট ভাগে বিভক্ত করে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়া হবে।অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য করোনা সংক্রমণের সবথেকে ঝুঁকি বহুল  রেড জোনকে আরও তিন ভাগে ভাগ করার তিনি পরামর্শ দেন ।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। সেখানে সতর্কতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবর। এদিন সেকথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী  জানান, ‘করোনা এখনই যাবে বলে মনে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীও স্বয়ং এ কথা বলেছেন। তাই আমরা তিনমাসের জন্য শর্টটার্ম প্ল্যান করছি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা জোনগুলিকে আরও ভেঙে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশকে এই মর্মে একটা প্রাথমিক গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেই গাইডলাইন মতে পরিকল্পনা করবে, তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি জানিয়েছেন রেড জোন এলাকা গুলিকে সংক্রমণের হার ও ঝুঁকির নিরিখে এ,বি, সি এই তিনভাগে ভাগ করা হবে। রেড জোন  -এ এলাকাগুলিতে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না । রেড জোন-বি এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে ব্যারিকেড দেওয়া অংশকে   রেড জো- সি  হিসাবে চিহ্নিত করে সেখানেও কিছু কিছু ব্যবসা ও পরিষেবা চালু করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।।কোন ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে, পুলিশ তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঠিক করবে ।ধাপে ধাপে এই ছাড় কার্যকর করা হবে ।

প্রথম দফায় কাল থেকে এবং  দ্বিতীয় দফায় ২১ মে থেকে ছাড়গুলি কার্যকর করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। সোনার দোকান, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকান ,মোবাইল চার্জিংয়ের দোকান খুলবে। রেস্তঁরা ছাড়া খাবারের দোকান খোলা থাকবে। ফিল্ম-টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে শুটিং ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এডিটিং, মিক্সিং, ডাবিংয়ের কাজ শুরু করা যাবে।বিড়ি শিল্পে এবং চা বাগানে ৫০ শতাংশ শ্রমিককে নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। তাঁতের হাট খোলা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।মুখ্য়মন্ত্রী জানান, সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকবে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ১০০ দিনের কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা চাইলে ১০০ দিনের কাজ করতে পারবে। তিনি  আরও বলেন, রাজ্যের ১০০টি ট্রেনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের ফেরানোর জন্য় এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এদিন সব জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মমতা। তার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে করোনা মোকাবিলায় অসহোযোগিতা ও রাজ্যের বিরুদ্ধে কুত্সা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দল বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। এদিন বিজেপির নাম না করেই তিনি বলেন, 'ভোট তো এখনও দেরি আছে, এত তাড়াতাড়ি দাঙ্গা, কুৎসা, চক্রান্ত! এমন পরিস্থিতিতে তা করা যায়?'তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছি, অন্য রাজ্য আমরা তো কোনও কথা বলছি না। মহারাষ্ট্র, গুজরাট এত আক্রান্ত মানুষ। ওঁরা তো লড়াই করছে। আমাদের সমবেদনা রয়েছে। কিন্তু এখানে শুধু রাজনীতি আর বদনাম।'মমতা বলেন, ৫২ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে পাবো। ২ মাস কোনও আয় নেই। সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। প্রাপ্তি শূন্য। এই পরিস্থিতিতেও দেনা শোধ করছে না কেন্দ্রের কাছে খালি থালা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। পরিকল্পনা না করে লকডাউন করায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =