কলকাতা: প্রত্যক্ষভাবে এখন আর রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে রয়েছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ মাতিয়ে রেখেছে দুটোই নাম, শোভন চট্টোপাধ্যায় আর বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়। বঙ্গ রাজনীতির এই জুটির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনার সীমা নেই। একদিকে যেমন শোভন-বৈশাখী অনেকদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বিজেপির সদস্যপদ ছাড়ার জন্য পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে তেমন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়ের থেকে কোনও পদত্যাগপত্র পাননি। সুতরাং, এই জুটি হয়তো এখনও বিজেপির নেতা-নেত্রী হিসেবে রয়ে যেতেই পারেন। বড্ড জটিল বিষয়।
তৃণমূল ছেড়ে গত বছরই বিজেপিতে গিয়ে নাম লিখিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গ নিয়েছিলেন ছায়াসঙ্গী বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়ও। কিন্তু বিজেপিতে গিয়েও খুব একটা শান্তিতে ছিলেন না কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। একুশের নির্বাচনে তিনি চেয়েছিলেন নিজের পুরোনো কেন্দ্র বেহালা পূর্ব থেকে বিজেপির হয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু তৃণমূলের হয়ে সেই কেন্দ্র থেকে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে দাঁড় করানোয় বিজেপি আর শোভনকে টিকিট দেয়নি। টিকিট দেওয়া হয়নি শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়কেও। তারপরেই বিজেপির সঙ্গেও সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন শোভন-বৈশাখী। তারা জানান, দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তাঁরা। মৌখিকভাবেও দলের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সদস্য দল ছাড়তে চাইলে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাতে হবে। রাজ্য সভাপতি সেই আবেদন গ্রহণ করলে তবেই বাতিল হবে সদস্যপদ। কিন্তু শোভন-বৈশাখী কী করেছেন?
সংবাদমাধ্যমকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই নিয়ে জানিয়েছেন, “তাদের কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। তারা কাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন জানি না। কবে সদস্য হয়েছিলেন তাও জানি না। ওনাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, উনি তার ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। শুধু মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, দল ছেড়ে দিয়েছি।” তবে কাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে বিজেপি ছাড়লেন শোভন-বৈশাখী? তবে কী তারা আদৌও বিজেপি ছাড়েননি? তবে কী তারা এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন? রহস্যের শেষ নেই। এদিকে, নারদকাণ্ডে দুই তৃণমূল মন্ত্রী ও এক বিধায়কের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার পর শোভন-বৈশাখী বারবার করে বলছেন বিজেপির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রথম থেকেই মৌখিকভাবে দল ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে এই জুটি। পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে সদস্যপদ খারিজ করেননি তারা। তাই দলের রাজ্য সভাপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করলে সদস্যপদ বাতিল হবে না। সুতরাং, হয়তো বিতর্কিত এই জুটি এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন। কে বলতে পারে?