খুলছে দোকান, চলবে বাস-অটো, চতুর্থ লকডাউনে বাংলায় নিয়ম বদল

খুলছে দোকান, চলবে বাস-অটো, চতুর্থ লকডাউনে বাংলায় নিয়ম বদল

কলকাতা:  কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে এ রাজ্যেও ২১ মে পর্যন্ত চলবে লকডাউন৷ তবে আগের লকডাউনের থেকে এই লকডাউনের মধ্যে বেশ কিছু ফারাক আছে বলে সোমবার নবান্নের বৈঠকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ লকডাউনের সঙ্গেই রাজ্যে চলবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে৷ 

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, গ্রাম ও শহরে কনটেনমেন্ট জোনকে বুথ ও ওয়ার্ডভিত্তিক তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ ‘এ’- হল সংক্রমিত এলাকা (Affected)  জোন, ‘বি’- বাফার জোন এবং ‘সি’- হল ক্লিন জোন৷ 

কনটেনমেন্ট জোন ছাড়া বাকি সব জায়গায় ২১ মে থেকে সমস্ত বড় দোকানগুলি খুলে দেওয়া হবে৷ তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে৷ এর কিছু দিন পর ২৭ মে থেকে খোলা হবে হকার্স মার্কেট৷ তবে হকার্স মার্কেট খোলার আগে কলকাতা পুলিশ কমিশনার, কলকাতা ও হাওড়ার মেয়র, এপিজি ল’ অ্যান্ড অর্ডার, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মিউনিসিপালিটি সেক্রেটারিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে৷ যেহেতু হকার্স মার্কেটের দোকানগুলি গায়ে গায়ে অবস্থিত, তাই সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে দোকান খোলা যায় তার রূপরেখা তৈরি করবে এই কমিটি৷ সাধারণত, জোড়-বিজোড় ফর্মুলা মেনে বিকল্প দিনে খোলা হবে দোকান৷ এর জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া হবে৷ দোকানে মাস্ক এবং গ্লাভস বাধ্যতামূলক৷ প্রতিটি বাজারে স্যানিটাইজেশন করতে হবে৷ হকার্স মার্কটে খোলার জন্য পারমিট দেবে পুলিশ৷ 

এক দিন অন্তর সরকারি অফিস খোলার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বেসরকারি দফতরে দিনে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করা যাবে৷ মল না খুললেও, মলের ভিতরে থাকা অফিসগুলি খোলা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে খোলা যাবে হোটেল৷ তবে এখনই রেস্তোরাঁ খোলা যাবে না৷ ২১ তরিখ থেকে আন্তঃজেলা বাস চালু করা হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে৷৷ সরকারি বাসও চালানো হবে৷ সম্ভব হলে যাতে বেসরকারি বাসও চালানো হয়, সেই আর্জিও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি জানান, এই মাসের ২৭ তারিখ থেকে অটো চলাচল করবে৷ তবে অটোতে দু’জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না৷ লকডাউনের জেরে বহু খেলাই ভেস্তে গিয়েছিল৷ তবে এবার থেকে খেলা চলবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে জমায়েত করা চলবে না বলেও সাফ জানানো হয়েছে৷  বিয়ে বাড়ি এবং সৎকারের ক্ষেত্রে এবার থেকে ১৫ জনকে অনুমতি দেওয়া হবে৷ 

এদিকে, সামাজিক দূরত্ব মেনে খোলা হবে সেলুন বা বিউটি পার্লার৷ তবে একই কাঁচি বা অন্যান্য উপকরণ বারবার ব্যবহার করা যাবে না৷ প্রতিবার ব্যবহারের আগে তা স্যানিটাইজ করতে হবে৷ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কার্ফু জারি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নাইট কার্ফুর নামে মানুষের ভোগান্তি ঠিক নয়৷ আমরা সরকারিভাবে কার্ফু ঘোষণা করছি না৷ বরং রাজ্যবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, সন্ধ্যা ৭টার পর ঘরে থাকুন৷ ৭টার পর অযথা জমায়েত করলে পুলিশি পদক্ষেপ করা হবে৷ 

পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ঢুকতে শুরু করেছে৷ এদিনই বাংলাদেশ থেকে বিমানে করে ১৬০ জন এ রাজ্যে ফিরেছেন৷ তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ট্রেনে ও বাসে করে বাংলায় ঢুকেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, রাজ্যের সীমান্তে আসার আগে খবর দিয়ে আসবেন৷ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে সীমানায় আসবেন না৷ কারণ, সেই সময় লকডাউন চলবে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যে রাজ্যে ১৫টি ট্রেন এসে গিয়েছে৷ আসার পর তাদের স্ক্রিনিং করতে হচ্ছে, তাদের বাড়িতে পাঠাতে হচ্ছে৷ মনিটরিং করতে হচ্ছে৷ রাজ্যের নামে কুৎসা না রটিয়ে, সরকাররে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে দিন৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেউ কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে চেষ্টা করছেন৷ আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, দায়িত্ব আছে৷৷  আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁরা মানুষকে প্ররোচনা দিচ্ছে। নাম না করেই বিরোধীদের তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ১১৫টা ট্রেন বুক করা হয়েছে৷  ২-৩ দিনের মধ্যে আরও ১২০টি ট্রেন চাইবে রাজ্য৷ যাতে দিনে পাঁচ-ছটা ট্রেন আনা সম্ভব হয়৷ এর জন্য যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে৷ মোট ২৩৫টি ট্রেন আনা হবে রাজ্যে৷ পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একহাত নিয়ে মুখ্যমবন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের থেকে টাকা নিচ্ছে, লজ্জা করে না! বাংলায় যে সকল ভিন রাজ্যের শ্রমিক আছে, তাদের পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে সরকার৷ কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে আটকে পড়া বাংলার শ্রমিকদের পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাঁর৷ 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য থেকে অনেক নার্সকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছে, এটা ঠিক নয়। একজন নার্স তৈরি করতে ২ বছর সময় লাগে৷ একজন চিকিৎসক তৈরি করতে ৪-৫ বছর সময় লাগে৷ বেসরকরি হাসপাতাল হলেও, তাঁরা আমার রাজ্যেরই নার্স-চিকিৎসক৷ পুরুষ নার্সদের কাজে নেওয়ার যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্তদেরও কাজে নেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। শুধুমাত্র রেসিডেন্সিশিয়াল কমিশনারকে ডেকে নেওয়া হয়েছে। এটা অসৌজন্যমূলক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হয়তো ভুল বোঝানো হয়েছে। আমপান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, রাজ্যের সামনে এই মুহূর্তে তিনটি জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথম হচ্ছে করোনা। দ্বিতীয়ত পরিযায়ী শ্রমিক। তৃতীয়ত আমপান ঝড়। তবে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তাঁর আবেদন,  নিজেরা নিজেদের যত্ন নিন৷ সতর্ক থাকুন৷ মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক৷ গ্লাভস ব্যবহার করুন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *