কলকাতা: রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠনের পর ভুয়ো আইএএস অফিসার এবং ভ্যাকসিন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে৷ নাগরিক সমাজের প্রশ্নের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর মাঝেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছে সিপিএম। ইতিমধ্যেই চলতি ঘটনাপ্রবাহের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে বামপন্থীরা।
সিপিএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী যে প্রশ্নগুলোর উত্তর চেয়েছেন, তা হল – ১) কসবায় দেবাঞ্জন দেবের নেতৃত্বে যে ভ্যাকসিন ক্যাম্প হয়েছিল, সেটা জাল ভ্যাক্সিন সেটা কিভাবে প্রমাণিত হ’লো? দেশে ৮টি কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি এবং ৪৭ টি রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরিতে জাল ওষুধ পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে কোন ল্যাবরেটরিতে এই ভ্যাক্সিনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে?
২) তড়িঘড়ি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা কর্পোরেশনের এক মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে কেন বলানো হ’লো ওখানে পাউডার আর জল ছিল?
৩) কেন সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য cowin app এর পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গে benvax app চালু করা হ’লো। অভিযোগ এই app এ রেজিষ্ট্রিকৃত সার্টিফিকেট cowin app এ invalid certificate দেখাচ্ছে। benvax certificate রাজ্যের বাইরে কোথাও স্বীকৃত হবে না জেনেও কেন এখানে তা চালু করা হ’লো? শুধুই প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপানোর জন্য? না কি এই app কে সামনে রেখে লক্ষ লক্ষ ভ্যাক্সিন তৃণমূলী নেতা এবং বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, যার কিছু পৌঁছে ছিল দেবঞ্জনের হাতেও? এই জন্যই কি সাংসদ ওখানে পরম নিশ্চিন্তে ভ্যাক্সিন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে authentic vaccine বলে প্রশংসা করেছিলেন?
৪) তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নেতৃত্বে পুলিশি তদন্ত কি চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার মতো, ‘ভ্যাক্সিন জালিয়াতি’ ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই হচ্ছে? না হলে এত নেতা-সাংসদ-মন্ত্রী-কাউন্সিলরের সাথে ছবি, কলকাতা কর্পোরেশন ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনানন্সিয়াল কর্পোরেশনের নামে জাল ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলার ঘটনা সামনে আসার পরেও এদের একজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার তো দূরস্ত, জেরাও ক’রলো না কেন?
৫) সবার নাকের ডগায় কর্পোরেশনের লোগো লাগিয়ে দপ্তর চললো, অথচ ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর জানতে পারলো না? পাড়ায় বাড়ির ইঁট পড়লে যারা স্কোয়ারফুট অনুযায়ী হিসাব মিলিয়ে তোলা তুলতে হাজির হয়ে যায়, তারা টের পেল না, এটা বিশ্বাসযোগ্য?
৬) যে পুলিশের রক্তদান শিবিরে দেবাঞ্জন প্রধান অতিথি ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং সেই ছবি পুলিশের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে রাতারাতি মুছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তারা তদন্ত করবে, না কি ধামাচাপা দেওয়ার কাজ করবে?
৭) দেবাঞ্জনের মধ্যে আর এক সুদীপ্ত সেনের ছায়া দেখেই কি মুখ্যমন্ত্রী ও তার পেটোয়া সংবাদমাধ্যম জাল ভ্যাক্সিনের তত্ত্ব এনেছেন, যাতে ভ্যাক্সিন জালিয়াতি ধরা না পড়ে?
শমীকের কথায়, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমরা বলেছিলাম – বিধানসভায় আমরা শূণ্য হলেও রাস্তা প্রতিবাদ শূন্য হবে না। আমরা কথা রাখবই। প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই জারি থাকবেই। কাল-পরশু আপনার সব থানার বড়বাবুদের বলে রাখবেন লকআপগুলো একটু বড় করতে, কারণ রাস্তার লড়াইয়ে আমাদের সংখ্যা শূণ্য নয়।” সোমবারই কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বামপন্থীরা। আরও প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানান হয়েছে।