শীতের যন্ত্রণায় কাবু শবরদের উষ্ণতা ছড়ালেন ‘শবর পিতা’!

আচমকা তাপমাত্রার পতনে এবারের শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছে ওরা৷ আর ওদের এই কষ্ট ঘুম কেড়েছে 'শবর পিতা' তথা কলকাতার সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল অরূপ মুখার্জির৷

পুরুলিয়া: এবছর শীতের শুরুতেই পুরুলিয়ায় এক লাফে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমে যায় ৬.৪ ডিগ্রিতে৷ এখানকার ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদর গ্রামে হাইস্কুলের পিছনে খড়ের গাদার উপরে পাতলা বরফের আস্তরণ স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়৷ যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে ওটা 'ফ্রস্ট'৷ আচমকা তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে অনেক সময়ে জলীয় বাষ্প সূক্ষ্ম বরফের কণা হিসেবে জমলে এমনটা হয়৷ কিন্তু এতশত বোঝার ক্ষমতা নেই পুরুলিয়ার হতদরিদ্র শবর সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষগুলোর৷ কষ্ট যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী৷ তবে আচমকা তাপমাত্রার পতনে এবারের শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছে ওরা৷ আর ওদের এই কষ্ট ঘুম কেড়েছে 'শবর পিতা' তথা কলকাতার সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল অরূপ মুখার্জির৷

কলকাতা শহরে ব্যাস্ততম রাস্তায় ট্রাফিক সামলেও যিনি অবলীলায় সামলে চলেছেন সুদুর পুরুলিয়ার পুঞ্চা গ্রামে তার নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা 'পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল'৷ একইসঙ্গ শবর গ্রামগুলির হতদরিদ্র পরিবারগুলিকে৷ এই ওয়ান ম্যান আর্মি-র 'শবর পিতা' হয়ে ওঠার গল্পঃ আগেও লেখা হয়েছে 'আজ বিকেল'-এ৷  অরূপ বাবু মনে করেন,  ভগবান সকলের জন্ম দেয় কোন কারণে, সবাই তা বুঝতে পারে না কিন্তু উনি অনুভব করেন, ওনার  জন্ম হয়েছে শবর সম্প্রদায়ের জন্য৷

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও এই শবর সম্প্রদায়ের যেকোনো সমস্যায় ত্রাতা হয়ে পৌঁছে যান৷ এভাবেই তাঁর সংসারে সদস্য সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ তবে সরকারি বা অন্য কোনো সাহায্য ছাড়া একা হাতে এত শবর সন্তানদের রক্ষা করার ক্ষমতা নেই স্বীকার করেছেন অরূপ বাবু নিজেই৷ তা সত্ত্বেও স্বভাবতই হাল ছাড়েননি৷  তাই বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পুরুলিয়ার, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের লোধা-শবর সম্প্রদায়ের লোকেদের জন্য কম্বল, শীতবস্ত্র ও জামাকাপড় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন৷ এইসমস্ত জিনিস সংগ্রহ করার জন্য ঠিকানাও দিয়ে দিচ্ছেন সবজায়গায়৷ তার প্রচেষ্টায় সাড়াও মিলছে৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই শীতের জিনিস পাঠাচ্ছে৷ বেশ কয়েকটি সংস্থা এগিয়ে এসেছে, এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও ওনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন  অনেকেই ৷

গত ২৮ ডিসেম্বর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দ ভাগ করে নিতে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন ব্লকের শবর সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে বনভোজনের ব্যবস্থা করা হয় পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুলে৷ শবর পিতার উদ্যোগে “মনন” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে এই বনভোজনে যোগ শবর গ্রামগুলি থেকে আসা প্রায় ৪০০ জন৷ বনভোজনের পর সকলকে কম্বল বিতরণ করা হয় ৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *