কলকাতা: ‘শবর পিতা’৷ গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল অরূপ মুখপাধ্যায়কে সকলে এই নামেই চেনেন৷ সমাজের প্রতি তাঁর বিশেষ অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে সম্প্রতি হায়দরাবাদ থেকে ‘ইন্ডিয়ান হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড’-এ সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে৷ ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ডসেও নাম রয়েছে তাঁর৷ রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার৷ কিন্তু কোনও রকম সরকারি সহায্য জোটেনি তাঁর৷ এমনটাই অভিযোগ৷
আরও পড়ুন- সাত বছরেও মিলল না পূর্ণমন্ত্রী, নিশীথ-শান্তনুদের ‘অচল পয়সা’ বলে খোঁচা কুণালের
অরূপবাবু বলেন, আমার বাচ্চাদের দেখভালের জন্য কোনও রকম সরকারি সাহায্য পাইনি৷ পুলিশ বিভাগ থেকেও পুরস্কার হিসাবে দু’বার প্রসিডিং হয়েছে| আইপিএস অফিসাররা আমাকে নিয়ে অনেকবার টুইট করেছেন৷ কিন্তু আমার আগের সাউথ ট্রাফিক গার্ডের ওসি- দের সেটা ভালো লাগেনি| ভালো কাজ করার জন্য আমার দু’বার প্রসিডিং হয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতিতে আমার বাচ্চাদের আগলে রাখতে হচ্ছে| কারণ করনার তৃতীয় ঢেউ আসছে| নিজের চাকরির ক্ষতি করে আমাকে আমার বাচ্চাদের আগলে রাখতে হচ্ছে৷’’ বর্তমানে গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডে বদলি করা হয়েছে তাঁকে৷
কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তায় ট্রাফিক সামলানোই তাঁর কাজ৷ মাস গেলে বেতনের যে টাকাটা হাতে পান, তার একটা বড় অংশ খরচ করেন পিছিয়ে পড়া শবর শ্রেণির শিশুদের পড়াশোনায়৷ নিজের উদ্যোগে সুদূর পুরুলিয়ার পুঞ্চা গ্রামে গড়ে তুলেছেন ‘পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল’৷ এই বিশাল কর্মকাণ্ডের জন্য কোনও সরকারি সম্মান জোটেনি তাঁর৷ তবে অনগ্রসর শবরদের জন্য তার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে, তাঁকে সম্মানিত করেছে একাধিক বেসরকারি সংগঠন৷ অরূপবাবুর অবশ্য স্পষ্ট বক্তব্য, কোনও পুরস্কারের লোভে তিনি কাজ করেন না৷ তবে পুরস্কার পেলে মনের জোড়টা অনেক বেড়ে যায়৷ মাত্র ১৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর ‘পুঞ্চা নবদিশা মডেল স্কুল’৷ এখন সংখ্যাটা শতাধিক৷ শুধু পড়াশোনা নয় একইসঙ্গে তাদের থাকা, খাওয়ায় ব্যবস্থাও করেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন- ভারত সরকারের কৌঁসুলি পরিচয়ে প্রতারণা সনাতনের, BJP-কে চিঠি কলকাতা পুলিশের
কলকাতা পুলিশের থেকে তেমন কোনও সাহায্য পাননি অরূপ বাবু৷ গত বছর লকডাউনের সময় অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁকে৷ লকডাউনের মাঝে শবরদের জন্য খাবার পৌঁছতে গেলে তাঁকে বিভিন্নভাবে মানসিক হেনস্থা করেন পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার আইসি সাহেব৷ অরূপবাবু বলেন, ‘‘আমি যাতে খাবার পৌঁছতে না পারি, তার জন্য আমাকে বরাবাজার থানাতে ৫ ঘন্টা আটকে রাখা হয়৷ কিন্তু তার পরেও আমি পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় শবর সম্প্রদায়ের লোকেদের জন্য খাবার পৌঁছে দিই৷ আজকে ওই খাবার দেওয়ার জন্যই ব্রেভো ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইয়ে আমার নাম উঠেছে বেস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসাবে৷’’ আজও একই ভাবে চলছে তাঁর লড়াই৷