কলকাতা: ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে এর আগেও নির্বাচনের পূর্বে ডেপুটেশনের পথ নিয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। গত উপনির্বাচনেও সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না, এই অভিযোগ উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আতঙ্কে থাকেন ভোটকর্মীরা। আসন্ন পুরসভা নির্বাচনেও সেই আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনের শরণাপন্ন হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। আজ দুপুরে কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতরে ডেপুটেশন দিল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের এই সংগঠন।
সামনেই পুরসভা নির্বাচন। তাই নির্বাচন কমিশনারের কাছে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ে একাধিক দাবির কথা জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। যেখানে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গটিই ঘুরেফিরে এসেছে। ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, 'ভোটে কোন দল জিতবে আর কোন দল হারবে, তা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই, আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসতে। তা যদি ক্ষুন্ন হয়, তাহলে বিগত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যেভাবে আমরা সারা রাজ্য জুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, সেভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।' আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের সুনিশ্চিতকরণের লিখিত প্রতিলিপিরও দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। এই প্রসঙ্গে ডেপুটেশনে উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছে তারা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিভিক পুলিশ, বনরক্ষী মোতায়েন করে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছিল। সেই নির্দেশ সত্ত্বেও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াই সংবিধানের ২১ নম্বর আর্টিকলের কথা তুলে ধরে হুমকি বা শাসানোর ঘটনা 'অসাংবিধানিক' বলে জানিয়েছে ঐক্য মঞ্চ।
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “আসন্ন পুরসভা নির্বাচনের পূর্বে ভোট কর্মী হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা বিষয়ে ভোটকর্মীগণ চরমভাবে আশঙ্কিত। ভোট কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত এবং প্রতিটি বুথে নিরপেক্ষ ও নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সমস্ত ধরনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দাবি, প্রতিটি ভোটকর্মীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং কোথাও নিরাপত্তার দায়িত্ব সিভিক ভলেন্টিয়ারকে দেওয়া চলবে না। দায়িত্ব অর্পণ করার আগে নিরাপত্তার জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা ভোটকর্মীদের জানাতে হবে। ভোটে কোন্ দল জিতবে বা কোন্ দল হারবে সে নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব মর্যাদার সাথে পালন করে আসতে। সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই তা বিঘ্নিত হতে দেওয়া চলে না।”
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের সময় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ এবং নিহত হয়েছিলেন তরুণ শিক্ষক রাজকুমার রায়। তার পরিবার আজও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পায়নি। অবিলম্বে সেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কমিশনে দাবি জানিয়েছি।”
নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে দেওয়া ডেপুটেশনে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ উল্লেখ করেছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালীন প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়ের দুঃখজনক ঘটনার কথা। ক্ষতিপূরণবাবদ রাজকুমার রায়ের স্ত্রী অর্পিতা রায় বর্মণকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা এখনও তিনি পাননি। অবিলম্বে এই সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েছে ঐক্যমঞ্চ।