‘প্রতিবাদের’ মুখ ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, নিশানায় ছিল CAA, গর্জেছিলেন শিক্ষক-কৃষকদের হয়ে

‘প্রতিবাদের’ মুখ ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, নিশানায় ছিল CAA, গর্জেছিলেন শিক্ষক-কৃষকদের হয়ে

কলকাতা: চিরকাল নীরবে থাকা কবি শঙ্খ ঘোষ নীরবেই চলে গেলেন অনেক কিছু রেখে দিয়ে। রেখে দিয়ে গেলেন তাঁর অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি, রুখে দাঁড়ানো মনোভাব এবং প্রতিবাদী সত্ত্বা। কলমের খোঁচায় একাধিকবার গর্জে উঠেছেন তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ‘চুপচাপ’ থাকা শঙ্খ গর্জে উঠেছে অনেকবার, পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি অত্যাচারিতদের। নাগরিকত্ব আইন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের কৃষি বিল, সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রূপ দেখিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। গর্জে উঠেছিল তাঁর কলম, বাংলার বিশিষ্টজনদের প্রতিবাদের মধ্যে শঙ্খ ঘোষ নামটাও জ্বলজ্বল করেছে।

নাগরিকত্ব বিল যখন পাস হয়েছিল তখন তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল গোটা দেশের একাংশ। অসম থেকে শুরু করে ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গেও এই বিলের বিরোধিতা হয়। সেই বিরোধিতায় শামিল হয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছিলেন যে বাংলার বিশিষ্টজনেরা তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ঠিক একই রকমভাবে কৃষক আন্দোলনের পাশে রাজ্যের যে বিশিষ্টজনেরা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম বড় নাম ছিল শঙ্খ ঘোষের। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন তিনি। তার বার্তা ছিল, আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানানো হোক এবং একযোগে কৃষকদের সমর্থন করা হোক। একইভাবে শিক্ষক আন্দোলনকেও সমর্থন করেছিলেন কবি। শঙ্খ ঘোষের এই প্রতিবাদী মনোভাবকে সুক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কবি জয় গোস্বামী। তিনি বলেছেন, সমাজের যে কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে শঙ্খ ঘোষ অতিসংবেদনশীল ভাবে বর্জন করতেন। তীব্র এবং ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় কবিতা লিখে তিনি তাঁর প্রতিবাদ জানাতেন। শঙ্খ ঘোষের সৃষ্টির সঙ্গে মিলে মিশে যেতে পারত সমাজের নিচু তলার মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চস্তরের সকলেই, যারা প্রাত্যহিক জীবনের যন্ত্রণাকে সঙ্গে নিয়ে চলে।

কবি শঙ্খ ঘোষর আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তাঁর জন্ম ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায়৷ পৈতৃক বাড়ি বাড়িশালে৷ তবে তাঁর বেড়ে ওঠা পাবনায়৷ ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এর পর পেশা হিসেবে অধ্যাপনার কাজকেই বেছে নেন তিনি৷ বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একাধিক জায়গায় অধ্যাপনা করেছেন। পড়িয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, শিমলার ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও৷ সম্প্রতি করণায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। আজ সেই করোনাই প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তাঁর। কবির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্য জগৎ থেকে শুরু করে আপামর বঙ্গবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 16 =