মালদা: শাসকের দাদাগিরির সাক্ষী থাকল মালদার ইংরেজবাজার পুরসভা এলাকা৷ চোর সন্দেহে এক স্কুল শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে৷ এমনকি নিজের বাড়ির পোষা কুকুরকেও শিক্ষকের দিকে লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই নেতার বিরুদ্ধে৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চপল্লী এলাকায়। ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ইংরেজবাজার থানায়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
জানা গিয়েছে, আহত শিক্ষকের নাম সুদীপ টুডু। বাড়ি গাজোল থানার মালডাঙ্গা গ্রামে। একদিকে ক্রীড়াক্ষেত্রে যেমন তিনিই খুবই পরিচিত তেমনই তাঁর একটা পরিচয় তিনি পেশায় শিক্ষক। তাঁর এক আত্মীয় মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে তিনি হাসপাতালে যান। তার পর নিজের গাড়ি চালিয়ে মালঞ্চপল্লীতে নিজের বাড়ি যান।
অভিযোগ, সেই সময় তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা তাঁকে সাইকেল চুরির অপবাদ দিয়ে ঘিরে ধরেন। এমনকি বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। এরপর ওই শিক্ষক নিজের গাড়ির চাবি দেখিয়ে জানান, তাঁর সঙ্গে নিজের গাড়ি আছে। আর তিনি একজন শিক্ষক। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মারধর করার পর তাঁর গায়ে কাউন্সিলরের পোষা কুকুরকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় শিক্ষকের দেহ। দীর্ঘ রাস্তা তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে স্থানীয়দের কয়েকজনের তৎপরতায় উদ্ধার হন শিক্ষক৷ নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে । এই ঘটনায় অভিযুক্ত কাউন্সিলরের পরিতোষ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আহত শিক্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে। শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার জেরে এলাকাতেই ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য৷ যদিও এবিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটল কী ভাবে তার যথাযথ তদন্ত হোক। কোন সভ্য সমাজে এ জিনিস ঘটতে পারে না। এই ঘটনার ধিক্কার জানানোর ভাষা জানা নেই আমাদের। অবিলম্বে কাউন্সিলরসহ দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।’’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘শুধুমাত্র সন্দেহের বশে একজন শিক্ষককে জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে কুকুর লেলিয়ে দিয়ে এভাবে পৈশাচিক আক্রমণের ধিক্কার জানানোর কোনো ভাষা নেই৷ শিক্ষককের উপর এমন আক্রমণ কোনও সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না৷ অবিলম্বে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও জনপ্রতিনিধিসহ আক্রমণকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি৷’’