নিজস্ব প্রতিনিধি: খাস কলকাতার আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। বিভিন্ন সময়ে গ্রামের হাসপাতালগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বহু অভিযোগ সামনে এসেছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। এমনকী কলকাতা বা তার লাগোয়া সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসকরা রোগীর কিছু পরীক্ষা করতে দিলে তার ডেট পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। বাইরে থেকে সেগুলি করাতে গেলে খরচ হয় প্রচুর অর্থ। যা অধিকাংশের সাধ্যের বাইরে। এছাড়া রয়েছে একশ্রেণির চিকিৎসকদের রেফার রোগ। তবে এসব বোধহয় রাজ্যবাসীর গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আরজিকর হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে দুই চিকিৎসক হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়বেন এমনটা বোধহয় কেউ ভাবতেও পারেননি। যে ঘটনায় হতবাক চিকিৎসক মহল।
তখন অপারেশন থিয়েটারে রোগীর অস্ত্রোপচার হচ্ছিল। সেই সময় চিকিৎসকদের কতটা মনসংযোগ থাকা দরকার সেটা সকলেই জানেন। কিন্তু আরজিকর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এক নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর হাতে কত নম্বর স্ক্রু লাগানো হবে সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তীব্র বচসার পর একাধিক চিকিৎসক নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। সকলেই এর তীব্র নিন্দা করছেন। যথারীতি এই খবর পৌঁছে গিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা আরজিকর হাসপাতাল ঘুরে আসেন। তবে তাঁরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
কি ঘটনা ঘটেছিল সেখানে? হাসপাতাল সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে বীরভূমের এক বাসিন্দা সাইকেল থেকে পড়ে যান। তাঁর হাত ভেঙে যায়। এরপর আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে এলে চিকিৎসকরা বলেন তাঁর হাতে অপারেশন করতে হবে। সেই সূত্রে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অর্থোপেডিক বিভাগের তিন নম্বর ইউনিটে ওই রোগীর অস্ত্রোপচার শুরু হয়। রোগীর বাঁ হাত সাময়িক অসাড় করে, চোখ ঢেকে অস্ত্রোপচার শুরু করেন চিকিৎসকরা। সেই সময় এক চিকিৎসক অন্য এক চিকিৎসককে বলেন, ”এখানে ২২ ও ২৪ নম্বর স্ক্রু লাগবে। সেখানে তুই ১৬ আর ১৮ নম্বর স্ক্রু দিয়েছিস কেন?” তখন অপর চিকিৎসক পাল্টা কিছু মন্তব্য করেন। এরপরই ওই দুই চিকিৎসকের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়ে যায়। তখন পাশ থেকে অন্য এক চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়,”যা হওয়ার হয়েছে। ওখানে কুড়ি নম্বর স্ক্রু লাগিয়ে দে”।
আর সেই বিষয়টি নিয়ে বচসা চলার সময় দুই চিকিৎসক হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই হাতে গুরুতর চোট পাওয়া ওই রোগী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কারণ তিনি চোখে কিছু দেখতে না পেলেও পুরোটাই শুনতে পেয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন,” এটা কি হাসপাতাল? একই ভাঙা হাতে দুই ধরনের স্ক্রু লাগালে আমার জীবন তো বিপন্ন হতে পারে।” চিকিৎসকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি। কিন্তু চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, “এক্স-রে করে আঘাতের চিহ্ন আগে দেখে নিয়েই অপারেশন শুরু হয়। সেখানে এমন ভুল হল কি করে! আর ভুল হলেও অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়বেন, এ কেমন কথা!” বিষয়টি নিয়ে আরজিকর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, “প্রশাসনিক ভাবে হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কোনও অজুহাত শোনা হবে না”। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন ঘটনা ঘটবে কেন? সেই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কি আদৌ কোনও পদক্ষেপ করা হবে? যে ঘটনা ঘটেছে তা তো রোগীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মতো! তাই সাধারণ মানুষ চান অবিলম্বে স্বাস্থ্য দফতর এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিক। এছাড়া রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল যাতে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিক স্বাস্থ্য দফতর, এমনটাই চায় রাজ্যবাসী। এই পরিস্থিতিতে আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কতটা নড়েচড়ে বসেন এখন সেটাই দেখার।