RG Kar: কেন আগেই টাকা অফারের অভিযোগ নয়? মোড় ঘুরছে!

কলকাতা: নির্যাতিতার পরিবারকে টাকার প্রস্তাব!কেন আগেই অভিযোগ করা হয়নি?কেনই বা এই বিষয়টা জানানো হল না সিবিআইকে?জানিয়ে থাকলে ডিসি নর্থকে কেন ইন্টারোগেট করল না সিবিআই?নির্যাতিতা গণধর্ষিতই…

কলকাতা: নির্যাতিতার পরিবারকে টাকার প্রস্তাব!কেন আগেই অভিযোগ করা হয়নি?কেনই বা এই বিষয়টা জানানো হল না সিবিআইকে?জানিয়ে থাকলে ডিসি নর্থকে কেন ইন্টারোগেট করল না সিবিআই?নির্যাতিতা গণধর্ষিতই নন?আরজি কর কাণ্ডের মোড় ঘুরছে কোনদিকে?

অলরেডি দুটো দু রকম ভিডিও সামনে উঠে এসেছে।এক, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নাকি পরিবারকে টাকার ‘অফার’ দেওয়া হয়েছিল। এবং তা দেওয়া হয়েছিল পুলিশেরই তরফে। একটা ভিডিওতে নির্যাতিতার বাবাকেই বলতে শোনা গিয়েছে, “৯ তারিখ রাতে টাকা দেওয়া হচ্ছিল, যখন মেয়ের দেহ দোতলায় শোয়ানো ছিল। রান্নাঘরের পাশে ছোট জায়গায় নিয়ে গিয়ে টাকার প্রস্তাব দেন ডিসি নর্থ। আমি বলি, আপনার কাঁধের আইপিএস লেখাটা পেতে যে কষ্ট হয়, আমার মেয়ে তার চেয়েও কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছে। আপনি আমাকে টাকার লোভ দেখাচ্ছেন! আমাদের মর্মান্তিক লেগেছিল।”

আর দুই, নির্যাতিতার পরিবারেরই একাংশের দাবি, কোনও টাকার কথা বলা হয়নি। তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এই ভিডিও প্রকাশ করেছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাতে টাকার প্রস্তাব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্যাতিতার মা-বাবাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমাদের এসব বলার কোনও দরকার নেই। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আমরা কাউকে কিছুই বলিনি। মিথ্যে গল্প বানিয়েছে। আমরা বিচার চাইছি। যাতে ন্যায় বিচার পাই, তার ব্যবস্থা করুন। নিজেদের প্রচারের জন্য কেউ কেউ মিথ্যে প্রচার করছেন।”

দুটো ভিডিওরই সত্যতা যাচাই করেনি আজ বিকেল। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার থেকেই ওঠা দুধরনের দুটো কথা ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যে বিভ্রান্তি নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মিডিয়া কমিটির সদস্য কুণাল ঘোষ। কিন্তু প্রশ্ন হলো কুণালের তত্ত্বে জোর কতটা? কী বলেছেন তিনি? তাঁর কথায়, ”টাকা? অভিযোগ মারাত্মক! টাকা কিংবা টাকা নয়, দুরকম ভিডিওই প্রকাশ্যে। কিন্তু কৌতূহল, টাকার অভিযোগটা সিবিআইকে দেওয়া বয়ানে ছিল কি না। না থাকলে, কেন এতো বড় অংশটা সিবিআই কে বলা হয়নি? আর যদি বলা হয়ে থাকে তাহলে সিবিআই এতদিনে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে জিজ্ঞাসা করল না কেন?” একথা শুনে কেউ কেউ বলছেন সত্যিই তো, যদি ডিসি নর্থের তরফে টাকা অফার করা হয়ে থাকে, তাহলে তা নির্যাতিতার পরিবার কেন সিবিআই এর কাছে আড়াল করলো? আর যদি আড়াল না করে থাকে তাহলে সিবিআই কেন ডিসি নর্থকে ডেকে এখনো পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করল না? কারণ প্রায় এক মাস হতে চলল আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনের ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছে সিবিআই। আর পুলিশের উপর আস্থা না থাকলেও সিবিআই এর উপর ১০০% আস্থা আছে নির্যাতিতার পরিবারের। সেক্ষেত্রে টাকার ‘অফার’ হোক বা না হোক, গোটা বিষয়টাই তো এখন সিবিআইয়ের তদন্তাধীন। তাহলে সিবিআইয়ের তো সবটা জানা উচিৎ।

এছাড়াও এর পরিপ্রেক্ষিতে আরো একটা প্রশ্ন উঠে আসে। নির্যাতিতার বাবা যে অভিযোগ করেছেন ডিসি নর্থের বিরুদ্ধে, সেটা ধরে এগোনো হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই জানা জরুরী যে ডিসি নর্থ কি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন? বা কাউকে কি আড়াল করতে চাইছিলেন? কারণ, অলরেডি আরজি কর কাণ্ডে বিস্ফোরক তথ্য সিবিআই এর। আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে খুন ধর্ষণের ঘটনায় সম্ভবত গণধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যা যা তথ্যপ্রমাণ এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের হাতে এসেছে, তাতে গণধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলেই সিবিআই সূত্রের খবর। সব তথ্যপ্রমাণই ইঙ্গিত করছে, আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনে দোষী সঞ্জয় রায় একাই। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম NDTV সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে এই দাবি করেছে। যে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশই। তারপর থেকে দুর্নীতির ঘটনায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করলেও, ধর্ষণ খুনের ঘটনায় সিবিআই এর তদন্তে বিশেষ কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

সিবিআই এই মামলায় ১০০ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে। ১০ জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়েছে। তাতে এই ঘটনায় অন্য কারও যুক্ত থাকার কোনওরকম অভিযোগ আপাতত সামনে আসেনি৷ আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্টে স্টেটাস রিপোর্ট দেবে সিবিআই। সেই স্টেটাস রিপোর্টেই এই সব তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে ১৭ তারিখ।

অলরেডি সরব শাসকদল তৃণমূল। দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ২৪ দিনের নিষ্ক্রিয়তার পর সিবিআই যা জানাল তা ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশ বলে দিয়েছিল। তাঁদের দাবি, বিজেপির ছড়ানো ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব ফাঁস হয়ে গেছে। দ্রুত চার্জশিট ফাইল করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হোক। নয়তো নির্যাতিতার সঙ্গে অবিচার হবে। অতএব, এই গোটা বিষয় থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, ১৭ সেপ্টেম্বর সিবিআই এর স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আরজি কর কাণ্ডের রহস্য কিছু হলেও সামনে আসতে পারে৷ একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আরজি কর কাণ্ডের জল কোন দিকে গড়ায় , এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।