ফিরিয়েছিলেন সমাজের মূল স্রোতে, দেবতার আসনে নিত্যপুজো পান এই মার্কসবাদী নেতা

ফিরিয়েছিলেন সমাজের মূল স্রোতে, দেবতার আসনে নিত্যপুজো পান এই মার্কসবাদী নেতা

তারকেশ্বর:  সংসারের অভাব অনটন তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল বিপথে৷ হয়ে উঠেছিলেন সমাজ বিরোধী৷ সেখান থেকে আবার ফিরে আসা। বাম জমানার বিধায়ক তথা মন্ত্রী রাম চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি ফিরেছিলেন সমাজের মূল স্রোতে। হয়েছিল পুনর্জন্ম। তারকেশ্বরের বিশ্বনাথ সাঁতরার কাছে আজও দেবতুল্য রাম চট্টোপাধ্যায়৷ দেবতার আসনেই হয়েছে তাঁর ঠাঁই৷ ঠাকুর দেবতার সঙ্গে একই আসনে পুজো হয় এই মার্কসবাদী নেতারা৷ 

আরও পড়ুন-  নন্দীগ্রামকাণ্ডে দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠাল কমিশন, দ্বিতীয় দফায় বিপুল প্রার্থীর মনোনয়ন!

বিশ্বনাথবাবুর বাড়ির সিংহাসনেই রাখা আছে রাম চট্টোপাধ্যায়ের ছবি৷ দু’বেলা নিজের হাতে পুজো করেন৷ তাঁর বয়স এখন ৬৮৷ অবসরের জীবনে পুরনো স্মৃতি বারবার দেখা দিয়ে যায়৷ প্রথম জীবনের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল আসে তাঁর৷ বিশ্বনাথবাবু ছিলেন অষ্টম শ্রেণি পাশ৷ গরিবের সংসার৷ দু’পয়সা রোজগার করতে জড়িয়ে পড়েছিলেন অসৎ সঙ্গে৷ যা জুটত তা দিনে নেশার জিনিস কিনতেন৷ বন্ধ ডানলপ কারখানা খোলার জন্য বাম আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ সেই সময় কাছ থেকে দেখেছিলেন রাম চট্টোপাধ্যায়ের আন্দোলনকে৷ এমনকী পায়ে গুলিও খেয়েছিলেন বিশ্বনাথবাবু৷ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রামবাবুই৷ 

তারকেশ্বরে ভোট প্রচারে গিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী রাম চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, কিরে ভোটটা দিবি তো? উত্তরে বিশ্বনাথবাবু বলেছিলেন, ‘‘আপনাকে ছাড়া আর কাকে ভোট দেব?’’ এর কয়েক দিন পরেই তাঁর ডাক পড়ে৷ তারকেশ্বরে বিড়লা ধর্মশালায় পৌঁছন তিনি৷ তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেন রামবাবু৷ তাঁর মুখ থেকে সব কথা শোনার পর বলেছিলেন,  ‘তোকে চাকরি করতে হবে।’ বিশ্বনাথবাবু মনে মনে ভেবেছিলেন, ‘‘পড়াশোনা জানি না, কী করে চাকরি পাব?’’ এর পর বিশ্বনাথবাবুকে ডেকে পাঠান নিজের বাড়িতে৷ পরে তাঁকে অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন৷ এর পরই বারাকপুর জেলাশাসকের দফতরে তাঁকে গ্রুপ ডি-র চাকরি করে দেন রামবাবু৷ হাতে তুলে দেন নিয়োগপত্র৷ 

বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘চাকরির ওই চিঠিটাই আমার জীবন বদলে দিয়েছিল৷ আমার মতো তারকেশ্বরের বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছিলেন উনি৷’’ রামবাবু যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, সেই সময়কার কথাও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর৷ বললেন, ‘‘রামবাবুকে দেখতে কলকাতার হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু এতটাই কড়াকড়ি ছিল যে, দোতলায় কাউকে উঠতেই দেওয়া হচ্ছিল না৷ ভাবলাম পুরনো বিদ্যা কাজে লাগিয়ে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে পড়ি৷ চেষ্টাও করেছিলাম৷ কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা ধরে ফেলেন৷ এই কথাটা কোনও ভাবে রামবাবুর কানে গিয়েছিল। তারপর তিনি নিজে লোক পাঠিয়ে ডেকে পাঠান আমাকে৷’’

আরও পড়ুন- ‘ম্যারাথন’ বৈঠক! বিজেপির ২৩৪ আসনের প্রার্থী ঘোষণা শীঘ্রই

বিশ্বনাথবাবু জানান, তারকেশ্বর থেকে বাবার মন্দিরের চরণামৃত নিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। এরপর ১৯৮৬ সালের ৬ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে আজও বিশ্বনাথবাবুর কাছে তিনি জীবন্ত। প্রতিদিন তাঁর মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরকে খুঁজে পান৷ পুজো করেন ধূপ-ধুনো, ফুল দিয়ে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =