কলকাতা: ‘নেতাজি’ নামের সঙ্গে কোথায় যেন সারা ভারতবাসীর মনে এক আবেগ সঞ্চারিত হয়৷ ‘নেতাজি’ বলতেই স্বার্থহীন দেশ প্রেম, দেশ মাতার জন্য আত্মবলিদান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে লড়াই করার সাহস ও ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর স্বাধীনতার বার্তা বহন করে৷ আজ, ২৩ জানুয়ারি৷ ভারত মাতার সেই বির সন্তান সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে সারা দেশজুড়ে৷
ছাত্র অবস্থায় দেশের বৈপ্লবিক আন্দোলন ও বিপ্লবীদের আত্মবলিদান নাড়া দিত ছোট সুভাষের মনে৷ কটকে বিদ্যালয় পড়াকালীন ১১ আগস্ট শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদানের দিন হোস্টেলের বন্ধুদের নিয়ে উপবাস করেছিল ছোট সুভাষ, সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বেনিমাধব দাস তারও সায় ছিল এই আন্দোলনে৷ পরবর্তী সময়ে স্কটিশচার্জ কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে এক সক্রিয় ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসাবে উঠে এসেছিল সুভাষচন্দ্র বসুর নাম৷ সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার্থে ভরতি হন৷ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়েও তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এই সময় অমৃতসর হত্যাকান্ড ও ১৯১৯ সালে দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র ‘স্বরাজ’ নামক সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস৷
সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু৷ তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল৷ ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীর বিরোধিতার মুখে ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন সুভাষচন্দ্র৷ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতিপদে নির্বাচিত হন৷ এই নির্বাচনে গান্ধী পট্টভি সিতারামায়াকে সমর্থন দেন, নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর গান্ধী বলেন ‘পট্টভির হার আমার হার’৷ কিন্তু জয়যুক্ত হলেও তিনি সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছিলেন না। গান্ধীর অনুগামীরা তার কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। এই কারণে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৩৮ সালে সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করে অন্য দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও কুটনৈতিক সমর্থনের উপর। এই সময় জাপান গিয়ে আজাদহিন্দ বাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। পরাধীন ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি গোটা বাহিনীকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৪ সালে আজাদহিন্দ বাহিনীর সভায় তিনি বলেন , ‘তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব৷’ ১৯৪৫ সাল সিঙ্গাপুর থেকে রওনা হবার সময় তাইহকু বিমান বন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যায়৷ যদিও তা নিয়ে আজও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে৷