হরিশ্চন্দ্রপুর: এবারে বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ এক কর্মাধ্যক্ষ এবং বিরোধী দলনেত্রী। ঘটনার জেরে এলাকায় ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। প্রশাসনের তরফ থেকে এদের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে বিভিন্ন ধারায়।
ভুয়ো বেনেফিশিয়ারি লিস্ট তৈরি করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এবারে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল পুলিশ প্রশাসন। যদিও বিরোধী দলনেত্রী বর্তমানে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। কিছুদিন আগেই বরই এলাকার মোবারকপুর অঞ্চল থেকে শাসক দলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েতের সদস্যকে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় আরও চারজন ভুয়ো বেনেফিশিয়ারি। প্রত্যেকের নামে মামলা রুজু করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আরও কিছুদিন আগে বরই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনামণি সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর করেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু। যদিও প্রধান সোনামণি এখন পলাতক।
এদিকে নতুন করে শাসকদলের তিনজনের পদাধিকারীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ বন্যা ত্রানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস, শিশু ও নারী ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ রৌশনারা খাতুন, বিরোধী দল নেত্রী সুজাতা সাহার নামে এফআইআর করা হলেও তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই রয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেত্রীর বিরুদ্ধেও এফআইআর করা হয়েছে। যদিও বোর্ড গঠনের সময় থেকেই বিরোধী কংগ্রেস দলনেত্রী শাসকদলেই রয়েছেন।
২০১৭ সালে এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় অনেকের আংশিক ও বহু বাসিন্দার ঘরদোর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়! এরপর রাজ্য সরকারের তরফে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৩৩০০ টাকা ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত উপভোক্তাদের অনেকেই টাকা পাননি বলে তারা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। প্রশাসনিক সূত্রে সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেও তারা টাকা পাননি বলে দুর্গতদের অনেকেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে, দুর্গতদের নাম থাকলেও তাদের নামের পাশে অন্য অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। এ নিয়ে আাদলতে মামলাও করেছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন কংগ্রেসী বিধায়ক মোস্তাক আলম। সোমবার তার শুনানি রয়েছে। তার আগেই প্রশাসন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস, শিশু ও নারী ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ রৌশনারা খাতুন ও বিরোধী দলনেত্রী সুজাতা সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর করে।
এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে সভাপতি কোয়েল দাস সহ বাকিদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷ চাঁচলের এসডিপিও শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইন মাফিক পদক্ষেপ করা হবে। চাঁচলের মহকুমাশাসক কল্লোল রায় বলেন, তদন্তের পর প্রশাসনের তরফে এফআইআর করা হয়েছে। বাকিটা পুলিশ দেখবে। অভিযোগকারী কংগ্রেস বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন,” ২০১৭ সালে বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা হয়। ক্ষতিপূরণের টাকা আসে। কিন্তু যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা সেই টাকা পায়নি। দেখা যায় পঞ্চায়েত প্রধান সেই টাকা তার আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ হরিশ্চন্দ্রপুরের বাইরে বিভিন্ন এলাকা এমনকি বিহার, ঝাড়খন্ড, রাজস্থান সহ ভিন রাজ্যে ওই টাকা গেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ তারা টাকা পাক। আর অপরাধীদের শাস্তি হোক৷ যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, দল দুর্নীতি সমর্থন করে না। আইন আইনের পথেই চলবে।