এক হাঁটু কাদা ডিঙিয়ে সুন্দরবনের পাশে শিক্ষক সমাজ, সাগর-নদী-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ত্রাণ বিলি

এক হাঁটু কাদা ডিঙিয়ে সুন্দরবনের পাশে শিক্ষক সমাজ, সাগর-নদী-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ত্রাণ বিলি

574b896573faa33d1e9f27a89041287d

ক্যানিং: ভয়াবহ সাইক্লোন আমপানে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন এলাকা। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা চলছে ওই এলাকার দুর্গত বাসিন্দাদের। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতিও (এসটিইএ) এই মহান ব্রতে সামিল হল। সারাদিন প্রবল বর্ষণের মধ্যে আজ (১৭ জুন) গোসাবার ছোট মোল্লাখালির কালীদাসপুর গ্রামে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এসটিইএ-র পক্ষ থেকে আমপান তাণ্ডবে সর্বস্ব হারানো দুশোরও বেশি পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হল।

3e74efcc7e42b918f25c47377cbe211a

এর আগেও দুর্যোগের সময় সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করেছে এই সংগঠন। ইতিমধ্যেই  করোনা অতিমারির পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১১ লক্ষ চার হাজার তিন টাকা দান করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় সমিতির জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সরাসরি বিপর্যস্ত অসহায় মানুষের হাতে সাধ্যমতো খাদ্যদ্রব্য সহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে।

9e6a2a0ffd1bb167a500d1bda8b2a78b

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০ মে সুপার সাইক্লোন আমপান প্রবল গতিতে ধেয়ে এসে সবকিছু  তছনছ করে দিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে দুর্গত মানুষদের কাছে সরাসরি ত্রাণ পৌঁছে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির কর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সুন্দরবনের নোনা জলের নদীবেষ্টিত ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত গোসাবা থানা এলাকা। গরিব নিম্নবিত্ত উপজাতি ও আদিবাসী মানুষের বসবাস এখানে। এখনকার পুরুষরা অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক আর বাকিরা জীবিকা নির্বাহ করে সুন্দরবনের জলে জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া মধু সংগ্রহ করে। মেয়েরাও বাড়ির কাজ সামলে কাছাকাছি নদীতে মীন-কাঁকড়া ধরার কাজ করে। ফলে প্রতিটি মুহূর্তে বাঘ-কুমির-জলদস্যুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিন কাটাতে হয়।

c12902e17625da0ba4c4493b1af57622

ক্যানিং থেকে এক ঘণ্টা সড়ক পথে গদখালি। গদখালি থেকে লঞ্চে করে তিন ঘণ্টা গেলে নোনা জলের গোমোর নদীর একপাশে মরিচঝাঁপি আর অন্যদিকে ছোট মোল্লাখালি। এই মোল্লাখালির পঞ্চরাম ঘাটের ধার ধরে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম সর্বস্ব হারিয়েছে। এখানের একটি গ্রাম কালীদাসপুর। বুধবার (১৭ জুন) সারাদিন বজ্রবিদ্যুৎ সহযোগে প্রবল বর্ষণের মধ্যে পড়তে হয় এসটিইএ-র কর্মীদের। মাঝপথে আকাশ অন্ধকার করে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে লঞ্চ পাড়ে এনে নোঙর লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলে আবার রওনা দিয়ে কালীদাসপুর পৌঁছনো যায়। এখানে গোমোর নদীর পাড়েই ২০০টি পরিবারের হাতে সমিতির পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে পরিবার পিছু একটি বড় মশারী, গামছা, সরষের তেল (৫০০ মিলি), ডিটারজেন্ট (৪০০ গ্রাম), সয়াবিন (৫০০ গ্রাম) ও একটি নাইলন ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়।

123a5ea1740de1d5322cb3a62cc5df40

আজকের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সমিতির মুখপত্র ‘শিক্ষাবার্তা’-র যুগ্মসম্পাদক ডঃ কানাইলাল দাস, জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার, জেলা সহসম্পাদক অমিত হালদার, বারুইপুর মহকুমা সম্পাদক প্রদ্যুৎ হালদার, ক্যানিং মহকুমা সম্পাদক প্রসেনজিৎ হালদার ও জেলা কমিটির সদস্য অতীন্দ্রনাথ হালদার, পার্থ সাহা, প্রধান শিক্ষক শোভন দানিয়াড়ী সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। প্রসঙ্গত গত ১২ জুন কুলতলির গোপালগঞ্জে আমপান দুর্গত মানুষদের চুন, ব্লিচিং, মশারী, সয়াবিন, সরষের তেল, টর্চ, ডিটারজেন্ট তুলে দিয়েছে এসটিইএ। এরপর তাঁরা পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘিতে ত্রাণ বিতরণ করবন বলে জানিয়েছেন।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *