ক্যানিং: ঘূর্ণিঝড় যশ পরবর্তীতে এখনও ছন্দে ফেরে নি সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। চারিদিকে ধ্বংসের ছাপ এখনও স্পষ্ট। তার উপর পূর্ণিমার কোটালের প্লাবনে আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে পরিস্থিতি। গ্রামের চাষের জমি থেকে শুরু করে পুকুর-খাল সবকিছুই নোনা জলে পূর্ণ। মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও মেরামতি হয়নি। জীবনের কঠিন এই সময়ে অনেক সংস্থাই বিধস্ত এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অসহায় গ্রামবাসীদের অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলি তাদের পছন্দমত কিছু পরিবার অর্থাৎ যাঁরা তাদের ভোট দিয়েছে বলে মনে করে তাদের হাতে ত্রাণ তুলে দিয়েই দায় সেরেছে। ফলে গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গ্রামবাসীদের সেই অসহায়তার কথা জেনে দলমত নির্বিশেষে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি অর্থাৎ STEA-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা শাঁখার সদস্যরা। যশ বিধ্বস্ত শ্যামনগর গ্রামে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যান সদস্যরা। পথে-ঘাটে যশের আঘাতের চিহ্ন এখনও জ্বলজ্বল করছে। কোথাও ভেঙ্গে গিয়েছে রাস্তা, কোথাও আবার ইট পেতে কোনোভাবে যাতায়াত শুরু হয়েছে।
প্রবল দাবদাহের মাঝে দুর্গম সেই রাস্তা পেরিয়েই সাহায্য নিয়ে হাজির হন স্বেচ্ছাসেবকরা। কখনও গাড়িতে আবার কখনও দীর্ঘ ৩ কিমি হাঁটাপথ পেরিয়ে ত্রাণ নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান ঠাকুরান পাড়ে প্লাবিত শ্যামনগর গ্রামে।গ্রামের প্রায় ৩৫০পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে একটি বড় মশারী, সরষের তেল, সোয়াবিন, আলু, পেঁয়াজ ও হ্যালোজেন ট্যাবলেট তুলে দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে। জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার জানান, শুধু শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত আন্দোলনেই না শিক্ষক সমাজ যে এইসব দুর্গত মানুষদেরও পাশে আছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই তাদের এই কর্মসূচি।
শুধু ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া নয় সুন্দরবন ও সুন্দরবনবাসীকে রক্ষার স্থায়ী সমাধানের উদ্দ্যেশ্যে একটি বিকল্প রূপরেখা প্রস্তাব আকারে রাজ্য-কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাঁরা তুলে দেবেন বলেও জানিয়েছেন। যার জন্য নানান সমীক্ষা, গবেষণা ও সেমিনারের মাধ্যমে এই রূপরেখা প্রস্তুতিও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন জেলা সম্পাদক ডঃ কানাইলাল দাস, জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার, জেলার দুই সহসম্পাদক অমিত হালদার, বামদেব হালদার, বারুইপুর মহকুমা সম্পাদক প্রদ্যোৎ হালদার, ক্যানিং মহকুমা সম্পাদক প্রসেনজিৎ হালদার, জেলা কমিটির সদস্য সুতপা জানা, এলাকার সহকারী প্রধান শিক্ষক ব্রম্ভপদ মন্ডল, মহাদেব নস্কর ও অন্যান্যরা।