কলকাতা- করোনাকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে আমাদের৷ মঙ্গলবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে সেই ইঙ্গত স্পষ্টতই দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেইসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন তিনি৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত দু’মাস ধরে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ৷ কেন্দ্রের কাছে খালি থালা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বাংলাকে৷ ৫২ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছ বকেয়া রয়েছে৷ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকাটুকুও রাজ্য পাইনি৷ উপরন্তু ৫৫ হাজার কোটি টাকার দেনা শোধ করতে হচ্ছে৷ লকডাউনের মন্দা বাজারে রেশন-সহ নানা খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে রাজ্যকে৷ কিন্তু প্রাপ্তি সেখানে শূন্য৷
তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারি-শিক্ষকদের যতদিন পারবে সরকার সামলে যাবে, কিন্তু যাঁরা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক তাঁরা কী ভাবে বাঁচবেন? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কতদিন আর জমানো পুঁজি ভেঙে খাবে তাঁরা৷ এই অবস্থায় আপাতত তিন মাসের জন্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ তার পরে মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা করা হবে৷ সব শেষে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার চিন্তা ভাবনা করা হবে৷ এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া লকডাউন করাতেই যাবতীয় সমস্যা হয়েছে৷ এই মুহূর্তে একদিকে যেমন করোনাকে রুখতে হবে, অ্যদিকে আবার অর্থনীতিকেও সচল করতে হবে৷ জীবন এবং জীবিকার মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে আমাদের৷
এদিন রেড জোনের মধ্যেও তিনটে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ভাগে ভাগ করা হবে রেড জোনকে৷ রেড জোন ‘এ’-তে কোনও রকম কর্মকাণ্ডের অনুমতি দেওয়া হবে না৷ রেড জোন বি-তে সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে, তবেই মিলবে ছাড়৷ তবে নিয়ম ভাঙলে পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ‘সি’ জোনে কিছু কিছু খোলা থাকতে পারে৷ আগামী তিন দিনের মধ্যে পুলিশকে এই বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গ্রিন জোনে বাস ও ট্যাক্সি চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ কলকাতাতেও কিছু বাস চলছে৷ তবে সরকারি বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে না৷ বেসরকারি বাসগুলিকেও একই নিয়ম মেনে বাস চালাতে হবে৷ তবে সরকারি বাসে ভাড়া না বাড়লেও, বেসরকারি বাস চালানোর ক্ষেত্রে মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করলে তাতে সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
Red zones will be further broken into three categories – a,b,c. Police will figure it out. No change in containment zones: West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee #COVID19 pic.twitter.com/EMVySEDhBT
— ANI (@ANI) May 12, 2020
তিনি জানান, এবার থেকে জুয়েলারি, ইলেকট্রিক গুডস, ইলেকট্রনিক্সের দোকান খোলা যেতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোবাইল সার্ভিস এবং রেস্তোরাঁ বাদে খাবারের দোকান খুলুক৷ ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা যাবে৷ তবে দোকানে বসে কেউ খেতে পারবেন না৷ খাবার কিনে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে৷ বিড়ি শিল্পে ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ আমদানি-রফতানি চালু করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১০০ দিনের কাজের উপর বরাবর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ ১০০ দিনের কাজে বরাবরই বাংলা এগিয়ে রয়েছে৷ দু’মাস ধরে সব কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের উপর জোর দিতে হবে৷ যাঁরা বাইরে থেকে ফিরে এসেছেন, তাঁরা কাজ করতে চাইলে তাঁদেরও কাজ দিতে হবে৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ তবে এই মুহূর্তে বাইরে থেকে এক লক্ষ লোক বাংলায় ঢুকে গিয়েছে৷ আরও আটটা ট্রেন আসতে চলেছে৷ পরে আরও ১০০টি ট্রেনকে ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে৷ তবে তা পর্যায়ক্রমে করতে হবে৷ একসঙ্গে এত লোক ঢোকাতে পারব না৷ কারণ বাইরে থেকে আসা সকলের স্ক্রিনিং করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাসেই প্রায় ৯০ হাজারের মতো মানুষ বাইরে থেকে এসেছেন৷ এ ছাড়াও বেসরকারি গাড়িতে করে রাজ্যে এসেছেন অনেকে৷ তাঁর অনুরোধ, বাসে বা গাড়িতে রাজ্যে ঢুকতে চাইলে আগে থেকে ডিএম, এসপি-কে জানাবেন৷ সেই বুঝে ব্যবস্থা নেবে সরকার৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন স্বাস্থ্যসচিব হয়েছেন নারায়ণ স্বরূপ নিগম। তাঁকে বলব আধিকারিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করতে৷ অভিযোগ উঠেছে, কোভিড নিয়ে ব্যস্ত চিকিৎসকরা, তাই অন্য রোগের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না৷ কোভিডের জন্য অন্য চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না৷ চিকিৎসকদের বলব, কেউ এলে আগে তাঁর চিকিৎসা করুন, তার পর টেস্টের কথা ভাববেন৷ তবে যাঁদের ক্রনিক ডিজিজ আছে, তাঁরা শেষ মুহূর্তে এলে আমাদের কিছু করার থাকে না৷
আমি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বলেছি, অন্য সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের জিজ্ঞেস করুন, তাঁরাও বলবে দুঃসময়ে যাঁরা রাজনীতি করে, তাঁদের কি মানুষ ক্ষমা করে? এত তাড়াতাড়ি কুৎসা ছড়াতে হবে? এত তাড়াতাড়ি কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াতে হবে? আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে চলছে৷