কলকাতা: কৃষি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নতুন আইনের সৌজন্যে দেশের রেশন ব্যবস্থায় বিরাট প্রভাব পড়তে পারে বলে এবার আশঙ্কা বাজার বিশেষজ্ঞদের৷ চলতি রেশন ব্যবস্থায় কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে থাকে সরকার৷ সেই খাদ্যশস্য রেশনের মাধ্যমে বিলি করা হয়৷ কিন্তু নতুন কৃষি আইনে কৃষক চাইলে ভিন রাজ্য গিয়ে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারেন৷ কাকে তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করবেন, তা নির্ভর করবে কৃষকের উপর৷ আর ব্যবস্থায় সরকারের রেশনে খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় বিরাট প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ আর তাতেই রেশনে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হতে পারে বলেও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা৷
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রেশনে খাদ্যশস্য দেওয়ার বদলে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা ডিবিটি চালু করার জন্য চাপ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন রেশন ডিলারদের একাংশ৷ রাজ্যে এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চাপ বাড়িয়ে আসছে কেন্দ্র৷ বাংলা তাতে রাজি হয়নি৷ বাংলায় তা চালু না হলেও কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রেশনের খাদ্যের বদলে ডিবিটি ইতিমধ্যে চালু করেছে কেন্দ্র৷ সেখানে সরাসরি ভর্তুকি পেয়ে যাচ্ছেন রেশন গ্রাহকরা৷
বাংলার রেশন ডিলার সংগঠনের দাবি, কৃষক যদি সরাসরি সরকারের ঘরে তাঁদের উৎপাদিত শস্য না বিক্রি করেন, তাহলে রেশনে খাদ্যশস্য পাবে কোথা থেকে সরকার? এমনিতেই রেশনের খাদ্যশস্যে বিপুল ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে৷ কিন্তু, কৃষক যদি মান্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে দেয়, তাহলে রেশন ব্যবস্থা তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে৷ কেন্দ্রের কৃষি আইনের কারণে রেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ডিলারদের৷ শীঘ্রই এই নিয়ে পথে নেমে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির জন্য বৈঠকে বসছে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশন৷
সংগঠনের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কয়েকটি ফসলে বর্ধিত এমএসপি ঘোষণা করেছে৷ পাশাপাশি নতুন আইনে বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে চাষিদের থেকে সরাসরি কৃষিপণ্য কিনতে পারে, তারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে৷ বেসরকারি সংস্থাগুলি এমএসপির সমমূল্য দিয়ে চাষির থেকে সমস্ত ফসল কিনে নিতে পারে৷ ফলে কৃষকরা কিষাণ মান্ডিতে গিয়ে ফসল আর বিক্রিতে উৎসাহ নাও দেখাতে পারেন৷ এতদিন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামে গিয়ে ধান কেনার ব্যবস্থা ছিল৷ এতদিন মান্ডিতে চাষিরা ফসল বিক্রি করতেন৷ কিন্তু, এবার গোটা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে৷ আর তাতেই সরকারের হাতে কৃষকের ফসল সরাসরি না আশারও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে৷
কেননা, কৃষকরা যেখানে বেশি দাম পাবেন সেখানেই তাঁরা তাঁদের ধান বিক্রি করবেন৷ এটা স্বাভাবিক৷ সাধারণত খোলাবাজারে ধানের দাম এমএসপির থেকে কম হয়৷ কিন্তু, এবার খরিফ মরশুমে খোলাবাজারের দাম এমএসপির থেকে বেশি বা সমান হয়ে গিয়েছে৷ ফলে, কমেছে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার গতি৷ ফলে, সুযোগ বুঝে খাদ্যশস্য মজুত করার বড় গুদাম তৈরি কাজও শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ৷ বেসরকারি সংস্থাগুলিও খাদ্যশস্য মজুতের প্রস্তুতি শুরু করছে৷ খাদ্যশস্য মজুত করার ব্যবস্থা বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিতে পারলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে৷ একই সঙ্গে কমবে রেশন বণ্টনের মতো দায়ও৷