তৃণমূল আমলে আরও এক দুর্নীতি? রেশন দুর্নীতি-কাণ্ডে ED-র জালে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ

তৃণমূল আমলে আরও এক দুর্নীতি? রেশন দুর্নীতি-কাণ্ডে ED-র জালে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ

TMC

কলকাতা:  আরও এক দুর্নীতির পর্দাফাঁস! ৫৪ ঘণ্টা তল্লাশি শেষে ইডির হাতে আটক মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বাকিবুর! রেশন দুর্নীতি মামলায় আটক মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী৷ টানা তিন দিন ইডির তল্লাশির পর অবশেষে আটক বাকিবুর রহমান! কে এই বাকিবুর? কেন তাঁর বাড়িতে ইডির তল্লাশি? পশ্চিমবঙ্গ যেন দুর্নীতির ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, কটাক্ষ বিরোধীদের! গরু, কয়লা, সোনা, নিয়োগ দুর্নীতির মধ্যে নতুন করে সামনে এল রেশন কেলেঙ্কারি! নেপথ্যে কি বড় মাথা? তৃণমূল আমলে আরও এক দুর্নীতির পর্দাফাঁস করতে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা!

দুর্নীতির তালিকায় নতুন সংযোজন রেশন দুর্নীতি। প্রশ্ন উঠছে, এই রেশন দুর্নীতির তদন্ত যেভাবে শুরু করেছে ইডি, তাতে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যাবে না তো? এই দুর্নীতির বহর কতটা তা এখনও অবশ্য সেভাবে স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা তল্লাশি অভিযানে নেমেছেন, তাতে এই দুর্নীতির অঙ্ক যে যথেষ্টই বড় তা ভেবে নিতে অসুবিধা হয় না। আর এই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের।

রাজ্যের এক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি, হোটেল, রাইস মিলে বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে ‌ইডির তল্লাশি। বৃহস্পতিবার পেরিয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে সেই তল্লাশি অভিযান। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ দিন দিন ধরে তল্লাশি অভিযান চালানোর পর ন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে আটক করে ইডি আধিকারিকরা। তবে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করেনি ইডি৷ তিন দিন ধরে ম্যারাথন তল্লাশি অভিযানের পর শুক্রবার দুপুরে  অভিযুক্তকে নিজেদের গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যান ইডির আধিকারিকরা৷

রেশন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বুধবার ইডি নদিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দেয়। সেই সঙ্গে সল্টলেক এবং নিউটাউনেও চলে তল্লাশি অভিযান। এক্ষেত্রে ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন বাকিবুর রহমান নামে ওই ব্যবসায়ী। যিনি রাজ্যের এক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ বলে ইডি জানতে পেরেছে। বাকিবুরের ঘনিষ্ঠের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। জানা গিয়েছে কৈখালির এক অভিজাত আবাসনে বাকিবুরের ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর হোটেলটিও রয়েছে ওই এলাকাতেই। এই হোটেল এবং ফ্ল্যাটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় তল্লাশি চালায় ইডি। সেই সঙ্গে বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলেও ইডি সূত্রে খবর। রাজ্যের রেশন দুর্নীতির সঙ্গে বাকিবুর সরাসরি জড়িত বলেও তদন্তকারীদের ধারণা।

এখন প্রশ্ন, কে এই বাকিবুর রহমান? একটি সূত্রে জানা গিয়েছে বাম আমলে বাকিবুর রহমান নাকি ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন। প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সরল দেবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। শোনা যায় বাম নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়েই বাকিবুর রাইস মিল ব্যবসায় নামেন এবং রাতারাতি সেই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে। সেই ব্যবসা থেকেই হোটেল ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। একটা  সময় ক্ষমতা থেকে সরে যায় বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আর তারপর থেকেই বাকিবুর শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বলে একাধিক সুত্রে জানা গিয়েছে। সেই সূত্রে এক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না।

বিরোধীদের কটাক্ষ, গোটা দেশের মধ্যে তৃণমূল আমলে পশ্চিমবঙ্গ যেন দুর্নীতির ‘এপিসেন্টার’ বা ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমনিতেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা পাচার, গর পাচার, পুর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জেরবার শাসক দল। এই ইস্যুতে প্রতিদিন তৃণমূলকে আক্রমণ করছে বিরোধীরা। তৃণমূলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক দুর্নীতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো সামনে চলে এল রেশন দুর্নীতি।

ইডি আধিকারিকদের অনুমান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির টাকা খাটানো হয়েছে রাইস মিলে। এর আগে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর বীরভূমের একাধিক রাইস মিলে হানা দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এবার নতুন করে রেশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইডি। তাই এর তদন্ত এগোলে আগামী দিনে আরও বড় নাম সামনে চলে আসবে না তো? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে রেশন দুর্নীতির তদন্তের সূত্রে রাজ্যে কোনও বড় ঘটনা ঘটে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *