‘বড়লোকের বিটি লো’ গেয়ে বিতর্কে জড়ান বাদশা! পদ্মশ্রী পেলেন সেই গানের স্রষ্টা, কী বলছেন রতন?

‘বড়লোকের বিটি লো’ গেয়ে বিতর্কে জড়ান বাদশা! পদ্মশ্রী পেলেন সেই গানের স্রষ্টা, কী বলছেন রতন?

কলকাতা: ‘বড়লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল…’ এক সময় বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফিরত এই গান৷ এই লোকসঙ্গীতটি শোনেননি এ রাজ্যে তেমন মানুষ এক কথায় হাতে গোনা। সম্প্রতি এই গানটি নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়৷ বলিউডের জনপ্রিয় র‌্যাপার বাদশার গাওয়া ‘লাল গেন্দা ফুল’ নামে একটি গানের পাঞ্চলাইন ছিল ‘বড়লোকের বিটি লো’র প্রথম পঙ্‌ক্তি৷ গানের রিমিক্স নিয়েও বিস্তর উন্মাদনা তৈরি হয়৷ কিন্তু, কেউ মনে রাখেনি এই গানের স্রষ্টাকে৷ অনেকেই জানেন না এই বিখ্যাত গানের নেপথ্য নায়ক কে? মূলত শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তীর কন্ঠে এই গান জনপ্রিয়তা পেলেও, গানটি লিখেছিলেন বীরভূমের রতন কাহার৷ 

তাঁর কলমে ঝরেছে বহু গান৷ তবে এক সময় আক্ষেপ করে রতন বলেছিলেন, এত গান লিখেও সংসার চলে না৷ এ বার সেই প্রথিতযশা লোকগান শিল্পীকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করল কেন্দ্রী। সরকারের ঘোষণার পর রতন বলেন, ‘‘অনেক দিন পর এতটা খুশি হলাম। বহু কষ্ট করে গানের জগতে বেঁচে রয়েছি। বার্ধক্যে পৌঁছে তার সম্মান পেলাম।’’

রতন কাহার বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা। ভাদু গান গেয়েই শিল্পী-জীবন শুরু তাঁর। পরে নিজে গান বাঁধতে শুরু করেন। জেলায় জেলায় ঘুরে গান শোনাতেন তিনি৷ প্রসার ভারতীতেও সম্প্রচারিত হয়েছে তাঁর গান। ১৯৭২ সালে রেডিয়োতে প্রথম রেকর্ড করেন রতন। পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন ৭৭ টাকা ১৫ পয়সা। কিন্তু সেখানেও নিয়মিত গান করার সুযোগ মেলেনি। ১৯৭২ সালেই ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল’ গানটি সৃষ্টি করেন রতন। গানটি গেয়েছিলেন স্বপ্না চৌধুরী। বাদশার গাওয়া ‘লাল গেন্দা ফুল’ গানের পাঞ্চলাইনে রতনের ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটির প্রথম পঙ্‌ক্তির ব্যবহার নিয়ে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। এমনকী সুপারহিট এই গান থেকে বাদশা এবং সোনি মিউজিক ইন্ডিয়া মুনাফা লাভ করলেও, সৌজন্যের খাতিরেও স্রষ্টার নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ বিতর্কের ঝড় থামাতে ক্ষমা চেয়ে নেন বাদশা৷ এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় রতনের উদ্দেশে বাদশা বলেন, ‘‘আমি জানি, উনি খুব বড় মানের শিল্পী। তবে শুনেছি ওঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। আমি সম্মান দিয়ে ওঁকে সাহায্য করতে চাই।’’ করোনাকালে দেশ জুড়ে যখন লকডাউন, সেই সময় রতনের পাশে দাঁড়ান বাদশা৷ শোনা যায় তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকাও দেন বলিউড ব়্যাপার। 

সিউড়িবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বয়স বাড়লেও ছিঁটেফোটাও পাল্টাননি রতন। আজও লাল মাটির বুক চিড়ে হেঁটে বেড়ান পাগল সুরসাধক। তাঁর লেখা গান বিখ্যাত হলেও আর্থিক অবস্থা বদলায়নি গায়কের। সম্মান যে পাননি,  সে কথা বলা যায় না৷ ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক পুরস্কারই রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র, তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ থেকে দেওয়া বিভিন্ন পুরস্কার তাঁর ঘরে শোভা পায়৷ তবে এতগুলো বছর সুর সাধনার পর পেলেন পদ্মশ্রী সম্মান।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *