পেনসিলভেনিয়া: পুরাণ অনুযায়ী, মহাদেব হলেন অর্ধনারীশ্বর৷ তিনি নাকি একইসঙ্গে নারী এবং পুরুষ উভয়ই৷ তবে বাস্তবেও এমন অর্ধনারীশ্বর হতে পারে, তা সত্যিই বিরল৷ তাও আবার পাখি৷ সম্প্রতি একটি পাখির দেখা মিলেছে, যার শরীরের অর্ধেকটা নারী আর অর্ধেকটা পুরুষ৷ এই বিরলতম পাখিটির খোঁজ মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনিসলেভনিয়ায়৷
জেমি হিল নামে এক পাখিবিদ তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে এই পাখিটির ব্যাপারে জানতে পারেন৷ খবর পাওয়ামাত্র তিনি ক্যামেরা নিয়ে ছুটে গিয়ে ওই পাখিটির ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন৷ পাখিটি নর্দার্ন কার্ডিনাল প্রজাতির৷ সাধারণত পুরুষ কার্ডিনাল লাল রঙের হয় এবং নারী কার্ডিনাল ফ্যাকাসে বাদামি রঙের হয়ে থাকে৷ অথচ এর মধ্যে দু’রকমই বর্তমান হওয়ায় এই পাখিটি দু’টি লিঙ্গের মিশ্রণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ যদিও এটিই প্রথম না হলেও, মিশ্র লিঙ্গের পাখি খুবই বিরল৷ ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পাখিবিদ জেমি হিল, সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘এমন মুহূর্ত সারাজীবনে শুধু একবার পাওয়া যায়, লাখে একটা ঘটনা।’
হিলের এক বন্ধু তাঁকে জানান, তিনি পেনসিলভেনিয়ার ওয়ারেন কাউন্টিতে তাঁর পাখির জন্য রাখা বার্ড ফিডারে একটি অন্যরকম পাখি দেখেছেন। প্রথমে হিল ভেবেছিলেন, পাখিটি হয়তো লুইসিস্টিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে৷ লুইসিসস্টিকে আক্রান্ত পাখির পালকগুলো রং হারিয়ে ফেলে এবং বর্ণহীন হয়ে যায়। এই পাখিটিও হয়তো রং হারাতে শুরু করেছে৷ তবে পাখিটি শরীরে অর্ধেক নারী এবং অর্ধেক পুরুষ হবে বলে তিনি ভাবতে পারেননি। তবে তার বন্ধুর মোবাইল ফোনে তোলা ছবি দেখার পরে তাঁর ধারণা, এই পাখিটির বাইলেটারাল গাইনানড্রোমোর্ফিজম থাকতে পারে। যার কারণে একটি পাখির কার্যকরী ডিম্বাশয় এবং কার্যকরী একক শুক্রাশয় দুটোই থাকে। এরপর তিনি নিজের চোখে দেখতে সেই বাড়িতে যান, যেখানে কার্ডিনালটিকে দেখা গিয়েছিল। এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বিরল পাখিটির দেখাও পান এবং ছবি তুলতে সক্ষম হন।
গত ৪৮ বছর ধরে জেমি হিল পাখি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান যে, ‘কিছু প্রজাতির মধ্যে এমনটা থাকলেও, সেটা সাধারণত ধরা পড়ে না। কোষ বিভাজনের সময় ত্রুটির জন্যই একটি পাখির বাইলেটারাল গাইনানড্রোমর্ফ হতে পারে৷’ তিনি বলেন, ‘একটি ডিম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অঙ্গ আলাদা আলাদা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। এর ফলে জন্ম নেওয়া পাখিটি নারী ও পুরুষ দুইয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়।” এই সম্ভাব্য গাইনানড্রোমর্ফ নর্দার্ন কার্ডিনাল পাখিটি ওই অঞ্চলে এবারই প্রথম দেখা গিয়েছে এমনটা নয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক দম্পতি এইরকম একটি পাখির দেখা পেয়েছিলেন। হিলের মতে,যে তিনি যে কার্ডিনাল দেখেছেন, তা একই পাখি হতে পারে।